প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০৬:০৬ পিএম
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সারা দেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
শনিবার (১৩ মে) সময় সংবাদকে এ তথ্য জানায় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার জাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি বলেন, সারা দেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ নৌপথে সকল প্রকার নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। ধীরে ধীরে বাড়ছে বাতাসের গতিবেগ। ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ দ্রুত বাড়ায় উপকূলের সঙ্গে কমছে এর দূরত্ব।
শনিবার (১৩ মে) সকালে আবহাওয়া দফতরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
মোখা সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে এবং অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
‘মোখা’ নাম যেভাবে এলো
ইয়েমেন এ ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ‘মোখা’। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের নাম কেন দেয়া হয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এক কফির নামে? তা নিয়ে অনেকের মাঝে কৌতূহলের শেষ নেই।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিভিন্ন দেশ। যেমন এর আগে উপকূলে আঘাত হানা ‘সিত্রাং’ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিল থাইল্যান্ড। তেমনই ‘মোখা’ নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।
যদিও ‘মোখা’ শব্দের আক্ষরিক কোনো অর্থ নেই। ইয়েমেনের বন্দর শহর ‘মোখা’র নামে ঘূর্ণিঝড়ের এ নামকরণ করা হয়েছে।
১৯ শতক পর্যন্ত মোখা ছিল ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর। এ শহর থেকেই সারা বিশ্বে বিখ্যাত কফি ‘মোখা’ রফতানি করা হতো। কফির নামকরণও হয়েছে শহরের নামেই।
জেকেএস/