• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে মোখা, ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০৪:০৮ এএম

ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে মোখা, ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সময় যত যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোখা ততই শক্তিশালী হচ্ছে। ধারণ করছে ভয়ঙ্কর রূপ। পাশাপাশি বেড়ে চলেছে বিপদ সংকেত। সর্বশেষ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। শুক্রবার (১২ মে) রাতে আবহাওয়া অধিদফতরের ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মোখা আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ১৪ মে (রোববার) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ১৩ মে (শনিবার) সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।

এছাড়া অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

মোখার প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়লেই দুর্বল বেড়িবাঁধ উপচে পানি লোকালয়ের প্রবেশের শঙ্কায় রয়েছে খুলনার উপকূলবাসী। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলের মানুষ।

যদিও ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় উপকূলীয় তিন জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে উপকূলের মানুষ বলছে- দুর্যোগ আসলেই শঙ্কা বাড়ে। ঝড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে অথবা উপচে প্লাবিত হয় লোকালয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জলাশয়, ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়ি।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা আগামী ১৪ মে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করবে। এর প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত করার শঙ্কা নেই। তবে এর প্রভাবে উপকূলে বৃষ্টি ও বাতাস হবে।

ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ১৪ তারিখের (রোববার) এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার (১২ মে) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চলমান এসএসসি/সমমান পরীক্ষার চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ১৪ মের (রোববার) পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। অন্যান্য বোর্ডসমূহের উক্ত তারিখের পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলা ও জান-মালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন।  শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পতেঙ্গা ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, কাট্টলী ওয়ার্ড,  রাণী রাসমনিঘাট, আকমল আলী ঘাট এলাকায় জনসচেতনতা তৈরিতে জোর প্রচারণা চালায়। একইসঙ্গে সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

বাগেরহাটে উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন (মোংলা)। শুক্রবার (১২ মে) সকাল থেকে উপকূলের ১৪ স্টেশন থেকে সতর্কীকরণ মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে আসতে বলা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বঙ্গোপসাগর, সুন্দরবনের নদ-নদী ও মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে চলাচলরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিক, জেলে-মাঝিদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোস্টগার্ডের এ প্রচারণা চলবে।
 

আর্কাইভ