• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন

উন্নয়নে বাংলাদেশ-চীনের সক্ষমতা অলৌকিক!

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২৩, ০২:৩১ এএম

উন্নয়নে বাংলাদেশ-চীনের সক্ষমতা অলৌকিক!

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চীন ও বাংলাদেশ উভয়েই নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক অলৌকিক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

বাংলাদেশ ও চীনের উচিত আমাদের নিজ নিজ জাতীয় অবস্থার সঙ্গে মানানসই উন্নয়ন পথ অনুসরণে একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা। দেশ দুটির উভয়ের আধুনিকায়নের সাথে বিপুল জনসংখ্যা জড়িত বলেও জানান তিনি।  

শনিবার (৬ মে) রাজধানীর গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে কসমস ফাউন্ডেশন এবং ইউএনবির আয়োজনে রাষ্ট্রদূত লেকচার সিরিজে ঢাকা বেইজিং সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
 

রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব উন্নয়ন পন্থাকে চীন সম্মান করে আর এদেশটির উন্নয়নের পথে কৌশলগত যোগাযোগ ও পারস্পরিক শিক্ষা জোরদার করতে ইচ্ছুক। এ দেশ দুটির উচিত মূল স্বার্থের ইস্যুতে একে অপরকে সমর্থন করা এবং সমস্বরে বহিরাগত হস্তক্ষেপকে ‍‍`না‍‍` বলা।


তিনি বলেন, চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি নতুন স্তরে নিয়ে যেতে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতায় নতুন যুগের সূচনা করতে সর্বস্তরের বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করার এ সুযোগটি নিতে ইচ্ছুক। পদ্মা সেতু রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পের মতো বাংলাদেশে আটটি মেগা প্রকল্পে চীনের অংশগ্রহণ রয়েছে এবং খুব শিগগিরই রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের নির্মাণ কাজও শুরু করবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এদেশ দুটির শিল্পের মানোন্নয়ন এবং ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার উন্নয়নে এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর মান ও প্রতিযোগিতার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করতে ইচ্ছুক। তাদের উচিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ককে বন্ধুত্বের মডেল হিসেবে গড়ে তোলা। যে সম্পর্কের ভাগাভাগির মাধ্যমে ভবিষ্যতে মানব সম্প্রদায় গঠনে দুই দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক বিশ্বাস এবং স্বার্থের মিলনকে গভীর করতে হবে; আর ভালো প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের একটি মডেল স্থাপন করতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’
 

ওয়েন আরও বলেন, ‘আমরা যখন সমস্যাগুলো সমাধান করি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করি তখন আমাদের সবসময় বাস্তবতাকে মাথায় রাখা উচিত। আমাদের উচিত শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে চলা এবং কিছু দেশের উসকানিতে সৃষ্ট যুদ্ধ, ঔপনিবেশিকতা এবং লুণ্ঠনের পুরানো পথে চলতে অস্বীকৃতি জানানো।’


ওয়েন বলেন, সহযোগিতার নতুন প্রবৃদ্ধির জন্য ঢাকা ও বেইজিংয়ের উচিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও গভীর করা এবং নতুন প্রবৃদ্ধির পথগুলো খুঁজে বের করে কাজ করা। গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই) এর অধীনে সহযোগিতার সুযোগ বের করে চীন-বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক।

রাষ্ট্রদূত বলেন, তাদের অবশ্যই জাতিসংঘের সাথে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এবং জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনাকারী মৌলিক নিয়মগুলোকে সমুন্নত রাখতে হবে। আমাদের উচিত সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাকে রক্ষা করা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৃহত্তর গণতন্ত্রকে উন্নীত করা এবং বিশ্বব্যাপী শাসনব্যবস্থাকে আরও ন্যায্যা ও ন্যায়সঙ্গত করার জন্য একসাথে কাজ করা।

এদেশ দুটি উভয়ই অভূতপূর্ব সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, চীন তার স্বাধীনতার বৈদেশিক নীতি রক্ষা করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আরও সক্রিয় এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে বাংলাদেশকে সমর্থন করবে। শতাব্দী জুড়ে পুরো বিশ্ব বড় ধরনের এক অদৃশ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
 

চীন তাদের পূর্বসূরিদের কাঁধে ভর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছে। দুই বছরে এ দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে বলে যোগ করেন তিনি।


কসমস ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও প্রাক্তন পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।

এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশ ও চীন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বন্ধু হিসেবে একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে; এটি বাংলাদেশিদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি বড় উৎস। কারণ আমরা চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থানের সাক্ষী। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জনের জন্য চীনের সহযোগিতা অব্যাহত আছে। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের এ আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ভিত্তি তৈরি করবে। চীনা পক্ষ সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক’ লক্ষ্য করেছে এবং বিশ্বাস করে যে এর অনেক ধারণা চীনের মতোই।

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য উল্লেখ করে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, বাংলাদেশের উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতির পক্ষে কথা বলা উচিত এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উদারীকরণ এবং সুবিধার প্রচার করা উচিত। পাশাপাশি ‘বেড়া এবং প্রতিবন্ধকতা’ ডিকপলিং এবং একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করা উচিত।

এ সময় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অধ্যাপক কান্তি বাজপাই বলেন, চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে আসিয়ানেও বাংলাদেশ বড় ভূমিকা রাখছে।
 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা ব্রিজিং রোল হিসেবে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।


চীন অ্যান্ড সাউথ এশিয়া সেন্টার সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটেডিজের সেক্রেটারি জেনারেল লু ইয়াংই বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্যাটেজি নিয়ে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের চাপ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অতীতে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশের মতো দেশকে। উন্নয়নের পথে বৈদেশিক চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক শব্দ বিশ্লেষণ করে বলে দেয়া যায়; তারা কীভাবে একটি উন্নয়নশীল দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করছে। চীনের বিরুদ্ধে জোট গঠন করতে যাচ্ছে তারা।


ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজের অ্যাসিসট্যান্ট রিসার্চ ফেলো লি হংমেই বলেন, নিজেদের স্বার্থ শেষ হওয়ার পর পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ভারতকে ইন্দো প্যাসিফিক বা ভারত সাগরে নেতৃত্বের ভূমিকায় রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজির কারণে বর্তমানে বে অব বেঙ্গলকে গুরুত্ব দিচ্ছে চীন।

সভায় চীনের সেন্টার সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসআইআইএস) এর সিনিয়র ফেলো এবং চীন ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহাসচিব লিউ জংয়ি, চীনের ফুদান ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক লিন মিনওয়াং,চীনের সেন্টার সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (এসআইআইএস) এর ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সহকারী রিসার্চ ফেলো এল আই হংমেই এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিমসহ অনেকেই আলোচক হিসেবে অংশ নেন।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ