• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রশংসায় ভাসছেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৩, ০২:২২ এএম

প্রশংসায় ভাসছেন শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৯৭১ সালে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ কেবল স্বাধীন হয়েছে। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশ নিয়ে একটা মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে একটা তলাবিহীন ঝুড়ির সঙ্গে তুলনায় এনেছিলেন। সেই বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। তবে হেনরি কিসিঞ্জারের মতে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে নয়, বরং উন্নয়নের রোল মডেলের দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি এ সফর করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড়। এই সফরের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে তার সুশাসনের কথা।তার সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের এক একটি ধাপ অতিক্রম করে উন্নয়নের উচ্চশিখরে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর চলমান সফরে এই ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশ্ব প্রধানরা।

যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদারের আমন্ত্রণ নিয়ে জাপান সফরে যান তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনাকে ঘিরে প্রশংসার বৃষ্টি। যা যুক্তরাষ্ট্রেও অব্যাহত রয়েছে।

পাকিস্তানী শাসকদের শোষনে নিপীড়নে নিষ্পেষিত ও বিধ্বস্ত এক অর্থনীতি নিয়ে দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতির জনক এখন বেঁচে নেই। ১৯৭৫ সালে ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন তিনি। তবে তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোলমডেল।

শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। ২০২১ সালের মে মাসের ২৫ তারিখ তো বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দিন ছিল। যেখানে অন্য দেশের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টা একটা সময় অসম্ভব ছিল সেখানে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিবেশি দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংঙ্কার জন্য ২০ কোটি ডলার মুদ্রা বিনিময় চুক্তি অনুমোদন দিয়েছিল।

তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম ঘুচিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় বিশ্বের দরবারে আসীন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক যুগে দারিদ্র্য দূরীকরণ আর উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বড় সফলতা এসেছে। সব ঠিক থাকলে, ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ। আর ২০৪১ সালে উন্নত দেশের তালিকাভুক্ত হবে।

বিশ্বের নানা প্রান্তের গবেষক-বিশ্লেষকদের পাশাপাশি অর্থনৈতিক চালচিত্র পর্যবেক্ষণকারী নানা প্রতিষ্ঠানের অভিমত,  জম্মের ৫২ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নের দুর্বার গতি অর্জন করেছে। গত দুই দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক উন্নয়ন- যে কোনও সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। সামাজিক নিরাপত্তা,  অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ সব ক্ষেত্রেই বিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক বিষ্ময়ের নাম। 

নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়েছে পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প। বাস্তবায়নের পথে রয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ বড় বড় সব প্রকল্প। এ বছরের ১৭ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১৫,৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের রেকর্ড গড়ে। দিনে দিনে পদ্মা সেতু থেকে আয়ের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে পদ্মা সেতু থেকে সরকার আয় করেছে ৬৯ কোটি ২ লাখ ৮২ হাজার ৩৩০ টাকা।

প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নবম স্থানে রয়েছে। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা ও সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসাচ্ তাদের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। উন্নয়ন গবেষকরা আজকের শেষ হাসিনার বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’, ‘ইমার্জিং টাইগার’, দক্ষিণ এশিয়ার ‘তেজি ষাঁড়’- এমন সময় নানাবিধ নামে ভূষিত করে চলেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে প্রাধান্য পাবে অর্থনৈতিক চুক্তি
জাপান সফরকালে শেখ হাসিনা বলেন,"জাপান আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়নের অংশীদার।জাপান বাংলাদেশের জনগনের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সেখানে তিনি জাপানের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বানিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। চারদিনের এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের টোকিওতে পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।এ সফরকালে তিনি বেশকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।

জাপান সফর শেষ, ওয়াশিংটনের পথে প্রধানমন্ত্রী
জাপান সফর শেষে গত ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন পৌঁছান। এদিন তিনি ওয়াশিংটনের রিজ কার্লটন হোটেলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিষ্টালিনা জর্জিভার সঙ্গে বৈঠক করেন। 

এ সময় শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশকে প্রশংসার বাণীতে সিক্ত করেন। জর্জিভা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন।সব বাঁধা বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। 

বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্য ও উন্নয়নের ভূয়সি প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিষ্টালিনা জর্জিভা এ কথা বলেন। সাক্ষাতকালে তিনি আরও বলেন,"বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল"। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন করেছে।

বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান: প্রধানমন্ত্রী

অপর দিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণের অন্যান্য অঞ্চলকে আমরা একক অর্থনৈতিক অঞ্চল বিবেচনা করে বে অব বেঙ্গল নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার বানিজ্যিক গুরুত্ব তুলে ধরবো।এতে বাংলাদেশ ও ভারতসহ পুরো অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন,"বাংলাদেশ খুব শিগগিরই অনুন্নত দেশ থেকে উত্তরণ করতে যাচ্ছে। আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে একটি যৌথ ষ্টাডি গ্ৰুপ শুরু করেছি। কিশিদা বলেন, অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকে যে কাউকেই বাদ দেয়া হবে না, এটা সেই কথাই প্রমাণ করে।

বিশ্বব্যাংকের ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ’ এর তথ্য অনুসারে বাংলাদেশ ২০২১ সালে প্রবাস আয়ে প্রাপ্তিতে বিশ্বের ১০টি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে ছিল। ২০২০ সালেও বাংলাদেশ একই অবস্থানে ছিল। তবে ২০২১ সালে প্রাপ্ত প্রবাস আয় দুই হাজার ১৭০ কোটি ডলার থেকে ২.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ২২০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)তথ্য মতে, ১৯৭৬ থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা মোট এক কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশ সৌদি আরব, ১৭ শতাংশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, ১১.১৫ শতাংশ ওমান, ৭.৪৮ শতাংশ মালয়েশিয়া, ৫.৯৭ শতাংশ সিঙ্গাপুর, ৫.১ শতাংশ কাতার, ৪.৪৪৮ শতাংশ কুয়েত ও বাকিরা অন্যান্য দেশে গেছেন।

 

জেকেএস/

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ