প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৩, ০৩:১৭ এএম
এসএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন মো. রাহাত আল রাফি। রোববার (৩০ এপ্রিল) তার পরীক্ষা। কিন্তু বিদ্যালয়ে গিয়ে সে জানতে পারে তার নিবন্ধনের টাকা জমা হয়নি। আসেনি প্রবেশপত্রও। শিক্ষকরা তাকে সামনের বছর পরীক্ষা দেয়া পরামর্শ দেন। তবে রাফি তার সমস্যাটি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ইউএনও বিতান কুমার মণ্ডলকে জানান। খবর পেয়ে ইউএনও মাত্র ৫ ঘণ্টায় রাফির প্রবেশপত্রের ব্যবস্থা করে দেন।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে রাফির হাতে প্রবেশপত্র তুলে দেন পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব ও আলাউদ্দিন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম।
রাফি উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগের ছাত্র ও কোমরকান্দি গ্রামের কৃষক মো. আলফাজ মালিথার ছেলে। তিনি ঢাকা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন আলাউদ্দিন আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী। তার রোল নং -৫৮৭৩৩৬, রেজিস্ট্রেশন নং- ২৭০১১৫৩৫১৯।
প্রবেশপত্র দেয়ার সময় তার মা মোছা. মুসলিমা খাতুন উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে বেজায় খুশি মা ও ছেলে। আবেগাপ্লুত হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ইউএনওর প্রতি।
এ বিষয়ে পরীক্ষার্থী মো. রাহাত আলী রাফি জানায়, সে দুই হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছিল, কিন্তু শিক্ষকরা তাকে টাকা জমার রশিদ দেয়নি। গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিদ্যালয়ে প্রবেশপত্র আনতে গেলে শিক্ষকরা তাকে জানান তার নিবন্ধন হয়নি। তাই প্রবেশপথও আসেনি। উপায় জানতে চাইলে শিক্ষকরা তাকে আগামী বছর পরীক্ষা দেয়ার পরামর্শ দেন। শিক্ষকদের কথা শুনে হতাশ হয়ে বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানালে বাড়ির লোকজনও তাকে আগামী বছর পরীক্ষার কথা জানান।
সে আরও জানায়, বাড়ির লোকদের কথা শুনে সে আরও ভেঙে পড়েছিল। পরে গত শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে ইউএনও স্যারকে সে মুঠোফোনে তার সমস্যাটি জানালে শনিবার দুপুরে সে প্রবেশপত্র হাতে পেয়েছে।
রাফি বলে, ‘এ বছর পরীক্ষা দিতে পারব না, তা ভাবতেও পারিনি। স্বপ্নের মতো প্রবেশপথটি হাতে পেলাম। আমি খুব খুশি ও আনন্দিত। ইউএনওকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
ছেলের আনন্দ দেখে মা মুসলিমা খাতুন বলেন, ‘ইউএনও স্যার না থাকলে আমার ছেলের পরীক্ষা দেয়া হতো না। ইউএনওর উপকারের কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’
এ বিষয়ে খোরশেদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন। নিবন্ধন ছিল আগের প্রধান শিক্ষকের সময়ে। নিবন্ধনের টাকা জমা না হওয়ায় প্রবেশপত্র আসেনি।’
বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘কেরানির ভুলে হয়তো টাকা জমা হয়নি। তিনি সে সময় খেয়াল করেননি। তবে আজ ইউএনও স্যারের হস্তক্ষেপে ওই ছাত্র প্রবেশপত্র পেয়েছে।’
ইউএনও বিতান কুমার মণ্ডল সময় সংবাদকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি জানার পরে ডিসি স্যার ও এডিসি শিক্ষা স্যারের সহযোগিতায় রাতেই সমস্যাটির সমাধান করা হয়েছিল। আজ তার হাতে প্রবেশপত্র তুলে দেয়া হয়েছে।`
তিনি আরও বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা ছাত্রজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে এ ধরনের বাধা একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভাঙার একটি বড় কারণ হতে পারত। সেজন্য উপজেলা প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজটি করার চেষ্টা করেছে। তবে এত সহজে করতে পারব তা আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না।’
বিএস/