প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৩, ১০:৪৬ পিএম
দুবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, এমন কারও কথা কি শুনেছেন? নিশ্চয়ই এমন কেউ নেই যিনি দুবার নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইনজীবী মনে করেন, তার মক্কেল এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার নোবেল পেতে যাচ্ছেন। যা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
সম্প্রতি ঢাকার আপিল বিভাগে শুনানি হয় শ্রম আদালতে স্থগিত থাকা ড. ইউনূসের বিচার চলবে কি-না, তা নিয়ে। এ সময় শ্রম আদালতের মামলাকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে তার আইনজীবী দাবি করেন, ‘ড. ইউনূস নোবেলজয়ী, আগামীবারও তিনি নোবেল পেতে যাচ্ছেন। তার মতো মানুষকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে হয়রানি করতে।’
বকেয়া পাওনা নিয়ে শ্রম আদালতে মামলা করেছিলেন ড. ইউনূস পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মচারী। বকেয়া বেতনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা।
এ বিষয়ে অভিনেত্রী, নাট্যকার এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার কোনো মামলা করেনি, তবে শ্রমিকদের অভিযোগ আমলে নিয়েছে। যেকোনো শ্রমিকবান্ধব সরকার এটা করবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘হতে পারে আদালতকে প্রভাবিত করার জন্য ইউনূসের আইনজীবী ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা তার মক্কেলের কাছ সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে যে তিনি আবারও নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন।’
‘মিডনাইট ম্যাসাকার’ গ্রন্থের লেখক বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুখরঞ্জন দাসগুপ্তের মতে, সরকারবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার শর্তে হয়তো আবারও নোবেল পুরস্কার জয়ের আশ্বাস পেয়েছেন ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘ইউনূসকে নাকি পরামর্শ দেয়া হয়েছে, আপনি চালিয়ে যান। সরকারবিরোধী তৎপরতা ও অ্যান্টি-রাশিয়া কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাতে সফল হলে দ্বিতীয়বার নাকি তার নাম নোবেলের জন্য সুপারিশ করা হবে।’
তবে ড. ইউনূসকে দ্বিতীয়বার নোবেল দেয়ার এমন দাবির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে সুখরঞ্জন বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, তাকে কেন দুবার নোবেল দেয়া হবে। শান্তির জন্য একবার নোবেল পেলেও, তিনি তো অশান্তির হিরো।’
ড. ইউনূস শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোনো অবদান না রেখেই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলে দাবি করেন সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত।
১৯৭৫ সালের বর্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে দাবি করে এ লেখক বলেন, ‘ইউনূস ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিয় ও হিলারি ক্লিনটন এবং ওয়াশিংটনের একান্ত বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ইউনূস বাংলাদেশের নেতৃত্বে আসুক।’
‘তাই ২০০৭ সালে নোবেল পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাকে দিয়ে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল। এখন তারা শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের নামে হাসিনার সরকার পতনের চেষ্টা করছে,’ বলেন তিনি।
এ বিষয়ে ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) কর্মকর্তা বেনু ঘোষ বলেন, ইউক্রেনের ‘ইউরোমাইদানের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক মার্কিন ব্যক্তিত্ব এখন বাংলাদেশে সরকারের পতনচেষ্টার সঙ্গে জড়িত। আর মার্কিন রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড এর নেপথ্যের প্রধান লোক।
তিনি বলেন, ‘দুটি আন্দোলনের টেমপ্লেটের মিল আকর্ষণীয়। ওয়াশিংটন থেকে পাওয়া গোপন তহবিলের মাধ্যমে সরকারবিরোধী গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া, সুশীল সমাজের সমর্থন নিয়ে এটি সম্ভব হয়েছে। প্রথমে ইউক্রেনে, এখন বাংলাদেশে। আর ইউনূস হলেন বাংলাদেশের জেলেনস্কি।’
নিজ কর্মীদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করার জন্য বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন ড. ইউনূস। এমনকি কয়েক সপ্তাহ আগেও গ্রামীণ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন সাবেক কর্মচারী তাদের পরিবারকে ‘অত্যন্ত অনিশ্চয়তা এবং গভীর সমস্যায়’ ফেলার জন্য ইউনূসের সমালোচনা করেছেন। তবে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সামাজিক বিভিন্ন মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে তার পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
এদিকে, আপিল বিভাগ অবশ্য ড. ইউনূসের আইনজীবীর দাবির (দ্বিতীয় নোবেল পাওয়ার বিষয়ে) তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। আপিল বিভাগ বলেছেন, কে নোবেলজয়ী আর কে নোবেলজয়ী না, তা আদালতের বিবেচ্য বিষয় নয়। মামলাটি চলবে কি-না, সেটাই বিবেচ্য বিষয়। আর সে বিষয়েই কথা বলতে বলেন আদালত। এছাড়া ড. ইউনূসকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে- তার আইনজীবীর এমন বক্তব্যের পর আপিল বিভাগ এ মন্তব্য করেন।
লেখক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০০৬-০৮ সালে বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত সরকারের সময় ইউনূস নোবেল পেয়েছিলেন। যদি তিনি দ্বিতীয়বার নোবেল পান, তাহলে নোবেল পুরস্কারের আভিজাত্য খুব বেশি অবশিষ্ট থাকবে না।’
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও, তাদের স্থায়ী করা হয়নি।
শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেয়ার কথা থাকলেও, তা তাদের দেয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়।