• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আঞ্চলিক শান্তির জন্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ঢাকা-টোকিও’র গুরুত্বারোপ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৩, ০২:৫৭ এএম

আঞ্চলিক শান্তির জন্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে ঢাকা-টোকিও’র গুরুত্বারোপ

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আঞ্চলিক শান্তির জন্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান জরুরি বলে একমত হয়েছে জাপান ও বাংলাদেশ।


বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান।

বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হলে তা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা দেশের ওপর চাপ বাড়াবে এবং এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন দুদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বিবৃতিতে উভয় নেতা এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য এ সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘টেকসই, নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ’ প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।

শেখ হাসিনা এ বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য এ বাস্তুচ্যুতির মূল কারণগুলো সমাধান করে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে প্রথম দেশ হিসেবে জাপানের মানবিক সহায়তাসহ এ বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের জন্য জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের প্রতি জাপানের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে ভাসানচরসহ বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আনুমানিক ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইয়েনেরও বেশি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর আগেও প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করেছে জাপান।

দুই প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেখানে সহিংসতা ও সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ, আটক ব্যক্তিদের মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, প্রত্যাবাসনের পর রোহিঙ্গাদের স্বনির্ভর জীবনের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো উপযুক্ত সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে একমত হয়েছে দুদেশ।

কিশিদা রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

যৌথ বিবৃতিতে দুই প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসনের ভিত্তিতে বহুপাক্ষিকতার প্রতি তাদের সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুতর সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রাথমিক সংস্কারসহ জাতিসংঘকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ়সংকল্পের কথাও জানান তারা।

বিবৃতিতে কিশিদা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত ও স্কুলে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানে শিক্ষার সুযোগ করে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

কিশিদা জাপানের স্থায়ী সদস্য হওয়াসহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারে জাপানকে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সৈন্যদের সবচেয়ে বড় অবদানকারী হিসেবে বাংলাদেশের নেতৃত্ব এবং সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। আর শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘পিস বিল্ডিং সেন্টার’-এর সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

দুই প্রধানমন্ত্রী শান্তি সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে একমত হয়েছেন। উভয় নেতাই পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন বিশ্ব গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। পারমাণবিক অস্ত্রের অপ্রসারণ চুক্তি (এনপিটি) পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও ৫টি অপ্রসারণ ব্যবস্থার ভিত্তি এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তারা।


বিবৃতিতে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, তার সরকার সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন, সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করছে। তার সরকার সাধারণ মানুষের কার্যকরী অংশগ্রহণের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্কগুলো থামাতে সক্ষম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কিশিদা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাস্তবায়িত প্রকল্প ও জাপানি ব্যবসায়ের কাজে বাংলাদেশে কর্মরত জাপানিসহ বাংলাদেশে অবস্থানরত সব জাপানি নাগরিকের  নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যহত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে সহিংস সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলারও আহ্বান জানান।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ