প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৩, ০৩:৪০ এএম
কর-জিডিপি অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে করব্যবস্থা সংস্কার, অব্যাহতি হ্রাস ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর রূপরেখা জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলেছে, প্রতি বাজেটে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, আগামী বাজেটেও সে ধারা অব্যাহত থাকবে। সুনির্দিষ্ট পরামর্শ থাকলে আইএমএফ এনবিআরকে লিখিত আকারে জানাতে পারে। সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবে এনবিআর। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের সঙ্গে পৃথক তিনটি বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এদিন এনবিআরের আয়কর নীতির সদস্য ড. সামসউদ্দিন আহমেদ, মূসক নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানা এবং কাস্টমস নীতির সদস্য মাসুদ সাদিকসহ সংস্থাটির প্রথম সচিব ও দ্বিতীয় সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
সূত্র জানায়, আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক উইং পৃথকভাবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিদ্যমান পদক্ষেপগুলো আইএমএফকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই আলোচনায় ছিল তাত্ত্বিক। আগামী বছর কী পরিমাণ কর অব্যাহতি হতে পারে তার পরিমাণ জানতে চেয়েছে। তৎক্ষণাৎ এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। কারণ এগুলো বাজেটের গোপনীয়তার অংশ। এ ছাড়া ভ্যাট বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি), অটোমেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে, ভ্যাটে আদায় বাড়াতে এনবিআর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং প্রবৃদ্ধিও ঊর্ধ্বমুখী। আর অটোমেশনের কাজও দ্রুততার সঙ্গেই এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আয়কর বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে কিভাবে করজাল বাড়ানোর ক্ষেত্রে এনবিআর কাজ করছে- তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। তাদের জানানো হয়, কোন খাতে কত কর ছাড় আছে, কোন খাত কর আওতায় আসতে পারে, তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কর জাল বাড়াতে বাড়িওয়ালা, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য, গাড়ির মালিক, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগকারীদের ওপর নজর বাড়িয়ে বাড়তি লক্ষ্য অর্জন করতে চায় এনবিআর। এ জন্য সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি সই করা হয়েছে।
এনবিআরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, আইএমএফের শর্ত মেনে আগামী অর্থবছরে বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, যা এ বছরের লক্ষ্য থেকে ১৬ শতাংশ বেশি। কিন্তু চলতি বছরে রাজস্ব আদায়ে যদি ৩০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়, তাহলে আগামী অর্থবছরের লক্ষ্য অর্জনে এখনকার তুলনায় ২৫ শতাংশের বেশি শুল্ক-কর আদায় করতে হবে।
শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপি অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে এনবিআর একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। এতে দেখা গেছে, শুল্ক খাতে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ে শুল্ক অব্যাহতি পরিমাণ কমিয়ে আনা, শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস, বকেয়া শুল্ক আদায় কার্যক্রম জোরদার, আদালতে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, নতুন শুল্ক আইন প্রণয়ন, শুল্ক আদায় প্রক্রিয়া অটোমেশন এবং কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কার্যকর করা হবে।
আয়কর খাতে কর হার বাড়ানো, কর জাল সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের অডিট কার্যক্রম শক্তিশালী করতে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ডিভিএস) চালু, কর অঞ্চল সম্প্রসারণে কর আদায় বাড়ানো হবে।
ভ্যাট খাতে আদায় বাড়াতে অৃপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনা, খুচরা পর্যায়ে ফাঁকি বন্ধে ইএফডি মেশিন স্থাপন, ভ্যাট অব্যাহতির পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস, ভ্যাট হারও পুনর্বিন্যাস এবং জাল বৃদ্ধিতে নতুন ৫টি ভ্যাট কমিশনারেট আগামী বছরের মধ্যে স্থাপন করা হবে।