• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বারবার কেন আগুন?

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ০৫:৫০ এএম

বারবার কেন আগুন?

শামীম হাসান, ঢাকা

বাংলাদেশের চৈত্র ও বৈশাখ মাসে গরমটা বেশি থাকে। একদিক প্রখর রোদ, অন্যদিকে বৃষ্টির মৌসুম না হওয়ায় সবকিছুই থাকে শুকনো খটখটে। ফলে এই  দুই মাসে দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটে। রান্নাঘরের ফেলানো ছাই, বিড়ি সিগারেটের শেষাংশ থেকে যেমন আগুনের ধরে যায় তেমনি ক্রটিযুক্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকেও আগুনের উৎপত্তি হয়। কখনো কখনো স্বার্থ হাসিলের জন্যও ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বস্তি বা স্বল্পতলার মার্কেট ভেঙ্গে বহুতল মার্কেট করার পরিকল্পনা নিয়ে এমন নাশকতামূলক কাজ করা হয়।

নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কেউ নাশকতামূলকভাবে আগুন লাগিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের বিষয়টি জড়িত আছে কিনা তাও তদন্ত করে দেখতে হবে। সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং নিজ উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনও একই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনিও আগুনের ঘটনাকে নাশকতা মনে করছেন।

বারবার মার্কেট আর বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনায় আমাদের মনে নাশকতাটা শব্দটা স্থান করে নিয়েছে। কেননা স্বার্থ হাসিলের জন্য সাধারণত এসব স্থানে আগুন লাগানো হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কেটের পাশাপাশি অন্য স্থানেও আগুন ধরেছে। যার জন্য সবারই সতর্ক থাকা উচিত। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সিটি নিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

ঘটনা  ১: ক্যালেন্ডারের পাতায় তখন ৪ এপ্রিল। সূর্য তার আলো ছড়াতে শুরু করেছে। রোজার সময় হওয়ায় রাস্তায় মানুষের চলাচল তেমন একটা শুরু হয়নি। আর মার্কেটগুলোতে তখনও নীরবতা বজায় রেখে চলেছে। রাতের বেচাকেনা, সেহেরী ও ফজর নামাজের কারণে মার্কেটগুলোর ঘুম ভাঙ্গে দেরিতে। কিন্তু ৪ এপ্রিল সে সব নিয়ম কানুনের ধার  ধারেনি বঙ্গবাজার। মার্কেটের দোকান মালিক আর কর্মচারীদের আরামের ঘুমকে এক ঝটকায় পাশে ফেলে ছুটে আসতে হয়েছে। কেননা আগুনের লেলিহান শিখা তাদের প্রিয় বাজারকে ঘিরে ধরেছে। তাদের চোখের সামনে বেঁচে থাকার অবলম্বন দোকান এবং দোকানে থাকা কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস আপ্রাণ চেষ্টা করেও তা রক্ষা করতে পারেনি। কয়েক ঘন্টার আগুনে কয়েক হাজার দোকান আর কোটি কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে ছাই হয়েছে।

ঘটনা ২: বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনা তখনও ব্যবসায়ীদের হৃদয়ে জ্বলজ্বল করে জলছে। এ ক্ষত শুকিয়ে উঠতে না উঠতে ঢাকাবাসীকে আবার আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখায় পুড়তে হলো। দেখতে হলো ব্যবসায়ীদের সবকিছু হারানোর হাহাজারি। এবারের ঘটনায় মধ্যবিত্তদের কেনাকাটার অন্যতম স্বস্তির আশ্রয়স্থল রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেট। বঙ্গবাজারের মতোই ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে নিউ সুপার মার্কেট আগুনে পুড়তে শুরু করে। ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিনতলা ভবনটিতে আগুন ধরে। প্রায় চার ঘন্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে ততক্ষণে চোখের সামনে নিঃস্ব হয়েছেন শতশত দোকান মালিক। ঈদের আগে কর্মচারীরা হয়েছে বেকার। তাদের চোখে এখন শুধু শূন্যতা। যে কর্মচারী পরিবারের সদস্যদের জন্য ঈদের আনন্দ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল তার সামনে এখন শুধুই হতাশা।

দুটো বড় ধরণের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ভোরবেলায়। যখন সবাই ঘুমে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার উপায়ও ছিল না তখন। এসব ঘটনার পাশাপাশি ঢাকায় ও দেশের একাধিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সব ঘটনা অবশ্য বঙ্গবাজার বা নিউমার্কেটের মতো অতটা আগ্রাসী ভূমিকা নিতে পারেনি। তার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ সব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-চট্টগ্রাম নগরের বন্দরটিলা এলাকার জুতার একটি কারাখানায় ৬ এপ্রিল অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এ অগ্নিকাণ্ডে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনার দুইদিন পর অর্থাৎ ৮ এপ্রিল বঙ্গবাজারের পাশে বরিশাল প্লাজায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সকাল আটটার দিকে সংঘটিত এ অগ্নিকাণ্ড দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট।

১১ এপ্রিল চকবাজারের বিসমিল্লাহ টাওয়ারের পাশে একটি বহুতল ভবনের পাঁচতলায় সিরামিকসের গুদামে আগুন লাগে। এ ঘটনায়ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়। ১৪ এপ্রিল ঢাকার হাজারীবাগের একটি চামড়ার কারখানায় আগুন লাগে। সকাল সাড়ে দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

১৬ এপ্রিল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপি বস্তিতে আগুন লাগে। বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনা আসলেই নাশকতার গন্ধ পাওয়া যায়। তবে এখানে তেমন কিছু ছিল না কিনা তা জানা যায়নি। এখানেও স্বল্প সময়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। ফলে তেমন কোনো ক্ষয় ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

সর্বশেষ সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর উত্তরার বিজিবি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত একতলা টিনশেড মার্কেটটিতে আগুন ধরে। মোটর সাইকেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশের মার্কেট হিসেবে পরিচিত এ মার্কেটে দোকানের সংখ্যা প্রায় ৬৫। বেলা সাড়ে এগারটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। একই দিনে নারায়নগঞ্জের রূপসীতে ওরিয়ন ইনফেকশন লিমিটেড নামের একটি ওষুধ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এক ঘন্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আর্কাইভ