• ঢাকা বুধবার
    ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

মারা গেলেন শেকৃবির ছাত্রী মারিয়া

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম

মারা গেলেন শেকৃবির ছাত্রী মারিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হওয়া শিক্ষার্থী মারিয়া আক্তার চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। ওই শিক্ষার্থী অসুস্থতাসহ ক্লাস-পরীক্ষায় অনুপস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের অসহযোগিতায় হতাশ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ সহপাঠী ও পরিবারের।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারিয়ার মৃত্যু হয়। এর আগে ২৩ মার্চ সকাল সোয়া ৯টার দিকে শেখ হাসিনা হলের ১০ তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন তিনি।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ফয়েজ উদ্দিনের মেয়ে মারিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের (২০১৭ শিক্ষাবর্ষ) দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলেন তিনি। যদিও মারিয়ার পরিবার ও সহপাঠীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে শেকৃবি প্রশাসন। তাদের দাবি, মারিয়া আগে থেকেই মানসিক রোগে ভুগছিল, সেখান থেকে লাফ দিতে পারে।

মারিয়ার দুজন সহপাঠী সময় সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানান, মারিয়ার সিজিপিএ ৩.৫০ এর ওপরে ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে ক্লাস করতে পারেননি এবং বেশ কয়েকটি সিটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। পরবর্তীতে পরীক্ষা দেয়ার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার উপস্থিতি ৭০ শতাংশের কম থাকায় পরীক্ষা নিতে কেউ রাজি হয়নি। তাকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে আবার ভর্তি হতে বলা হয়।

এ ব্যাপারে কৃষি অনুষদের ডিন ড. পরিমল কান্তি বিশ্বাসকে জানালে তিনিও পরীক্ষা নিতে পারবেন না বলে জানান এবং পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে ক্লাস করতে বলেন।

তার সহপাঠীরা জানান, এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মারিয়া। তবুও তিনি ক্লাস করতে থাকেন। কিন্তু কিছুদিন পর আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে ক্লাসে তার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের নিচে নেমে যায়। পাশাপশি কয়েকটি সিটি পরীক্ষাও দিতে পারেননি। এরপর বিষয়টি আবারও শিক্ষকদের নজরে আনলে তারা এবারও পরীক্ষা নিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

ঘটনার আগের দিন হলে বেড়াতে আসা তার মায়ের সাথে এ নিয়ে আক্ষেপ করেন মারিয়া, কান্নাকাটিও করেন। পরদিন ২৩ মার্চ সকাল ৯টার দিকে মাকে তার হলের ৭০৩ নম্বর কক্ষে রেখে তিনি বের হন। এর কিছুক্ষণ পর হল ভবনের নিচ থেকে চিৎকার শুনতে পান সবাই যে, মারিয়া ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়েছে।

তাদের অভিযোগ, শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণেই মারিয়া আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। প্রশাসন আন্তরিক হলেই মারিয়া স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারত। শুধু তাই নয়, লাফ দেয়ার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাত, পা ভেঙে যায়, প্রচুর ব্লিডিং হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক রক্তের প্রয়োজন হলেও তা দেয়া সম্ভব হয়নি, রক্ত দিতে দিতে বিকেল হয়ে যায়।

লাফ দেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মারিয়ার চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক কোনো সহযোগিতা করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন সহপাঠীরা। বলেছেন, একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিলে শুরুতে হল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দেয়, পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আরও ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা দূরে থাক, ঢামেকে চিকিৎসা জোরদার করতে কোনো সহযোগিতা করেনি। প্রশাসনের এমন আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

লাফ দেয়ার পর শিক্ষার্থী মারিয়ার মা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমার মেয়ে আগে থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ। যার কারণে সে নিয়মিত ক্লাস করতে পারেনি। পর্যাপ্ত অ্যাটেন্ডেন্স না থাকায় গত বছর স্যাররা পরীক্ষা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ব্যাপারে অনুষদের ডিনকে জানালে তিনি সরাসরি পরীক্ষা নেবেন না বলে জানান এবং পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে ক্লাস করতে বলেন। এবারেও অসুস্থতার কারণে ক্লাস করতে পারেনি এবং কয়েকটি সিটি পরীক্ষায় অ্যাটেন্ড করতে পারেনি। স্যারদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তোমার অ্যাটেন্ডেন্স কম, তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতিতে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসাইন সংবাদমাধ্যমে বলেন, মেয়েটির ক্লাসে উপস্থিতির হার কম ছিল। পরীক্ষাও বাকি ছিল। এ নিয়ে হতাশায় ছিল। পাশাপাশি তার মানসিক ট্রিটমেন্ট চলছিল বলে শুনেছি। এখন কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে, তা বলতে পারছি না।’

আর প্রক্টর অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘তার ব্যাপারে গুজব ছড়ানো হয়েছে। একাডেমিক কোনো চাপের কারণে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেননি সেই শিক্ষার্থী বরং পারিবারিক এবং তার পূর্ব মানসিক সমস্যার কারণে এমনটা হয়েছে।’

যদিও মারিয়ার মা মানসিক অসুস্থতার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমার মেয়ে কখনো মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল না। ও দীর্ঘদিন শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। এর আগের সেমিস্টারে ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি ছিল।


এএল/

আর্কাইভ