• ঢাকা সোমবার
    ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রমজানে যানজটমুক্ত রাখতে চায় পুলিশ

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩, ১১:১৩ পিএম

রমজানে যানজটমুক্ত রাখতে চায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ট্রাফিক পুলিশের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও প্রতি বছর রমজান মাসে নগরবাসীকে তীব্র যানজটে ভুগতে হয়। পরিস্থিতি বলছে, এবারও হয়তো ওই ভোগান্তি থেকে রক্ষা নেই। রাজধানীর বহু সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, ফলে যানজট অনিবার্য। এ অবস্থায় যানজট থেকে মুক্তি দেয়ার মিথ্যা আশ্বাসে না গিয়ে পুলিশ বলছে, এবার তারা নগরবাসীকে ‘সহনীয় যানজট’ উপহার দিতে চান।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার সড়ক ও ফুটপাত দখল করে কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, ইফতারসামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করতে দেয়া হবে না। যানজটপ্রবণ এলাকার সড়কে থাকবে বিশেষ নজরদারি। সেখানে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও থাকবেন। একইসঙ্গে ইফতারের আগে সড়কে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে কাজ করবেন ক্রাইম বিভাগের সদস্যরাও। সঙ্গে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য।

রমজান সামনে রেখে দিনের বেলা সড়কে খোঁড়াখুঁড়িসহ উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখা এবং চলমান কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদও দিচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ।

তিনি বলেন, রমজানে মার্কেট, চার রাস্তার মোড়, বাণিজ্যিক এলাকায় বেশি যানজট তৈরি হয়। বিশেষ করে ইফতারের আগে ঘরমুখো মানুষ ও পরিবহনের চাপ তৈরি হয় সড়কে। সেখানে ট্রাফিক সদস্যদের সক্রিয় রাখা হবে। রুট পারমিট ছাড়া কোনো পরিবহনকে যাতায়াত করতে দেয়া হবে না। নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে সড়ক সচল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।

এবার সড়ক ও ফুটপাত দখল করে কোনো ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য, ইফতার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করতে দেয়া হবে না। যানজটপ্রবণ এলাকার সড়কে থাকবে বিশেষ নজরদারি। সেখানে পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও থাকবেন। একইসঙ্গে ইফতারের আগে সড়কে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে কাজ করবেন ক্রাইম বিভাগের সদস্যরাও। সঙ্গে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এবার ট্রাফিক আইন মানার জন্য সবাইকে সচেতন ও সতর্ক করব। পথচারী, চালক, যাত্রী সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করা হবে। না মানলে প্রয়োজনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মুনিবুর রহমান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সাধারণত যে যেভাবে পারেন চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই প্রবণতা যেন না থাকে সেজন্য ট্রাফিক বিভাগ ক্রাইম ডিভিশনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবে। ইফতারের আগে সড়কের মোমেন্টাম (গতিবেগ) ঠিক রাখার চেষ্টা থাকবে। সেজন্য অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হবে। মাঠ পর্যায়ে থাকবেন ট্রাফিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

‘উন্নয়ন কাজের কারণে অনেক সড়ক প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। রমজানে এর বড় প্রভাব পড়বে। আমরা অনুরোধ করেছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেন উন্নয়ন কাজ শেষ হয়।’

সিএনজি-পেট্রোল পাম্প কতক্ষণ চলবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিএনজি-পেট্রোল পাম্পের বিষয়ে নির্দেশনা আছে। সেটা সংশ্লিষ্ট দপ্তর দেখবে। নির্ধারিত সময়ের বাইরে কেউ পাম্প খোলা রাখলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এ সম্পর্কে মুনিবুর রহমান বলেন, সড়কে মানুষের ভোগান্তির আরেক নাম লক্কর-ঝক্কর বাস। ফিটনেস সার্টিফিকেট নিশ্চিত করে যেন সড়কে ব্যক্তিগত পরিবহন ও গণপরিবহন নামানো হয় সেজন্য আমরা পরিবহন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের সেটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য লক্কর-ঝক্কর ও ফিটনেসবিহীন পরিবহনকে অনেকাংশে দায়ী করছে ট্রাফিক বিভাগ। রমজানে ফিটনেস ছাড়া কোনো পরিবহন যেন সড়কে না নামে সেজন্য পরিবহন মালিকদের অনুরোধ করেছে ট্রাফিক বিভাগ।

রমজানে মার্কেট, চার রাস্তার মোড়, বাণিজ্যিক এলাকায় বেশি যানজট তৈরি হয়। বিশেষ করে ইফতারের আগে ঘরমুখো মানুষ ও পরিবহনের চাপ তৈরি হয় সড়কে। সেখানে ট্রাফিক সদস্যদের সক্রিয় রাখা হবে। রুট পারমিট ছাড়া কোনো পরিবহনকে যাতায়াত করতে দেয়া হবে না
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান
ফুটপাত-সড়কে বন্ধ থাকবে ইফতার বিক্রি

এসব এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে চাইলে লালবাগ ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আসমা সিদ্দিকা মিলি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানে এবার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যানজট যেন সহনীয় থাকে সেজন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে যারা বসবাস করেন তারা জানেন রাস্তার পরিমাণ ও অবস্থা। এরপরও পুরান ঢাকায় অনেকে গাড়ি নিয়ে ইফতার কিনতে যান। ইফতারের সময় যে পরিমাণ মানুষ রাস্তায় নামেন তখন সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হলে বিপুল পরিমাণ জনবল দরকার। সেটি আমাদের নেই। যেসব জায়গায় বেশি যানজট হয় সেখানে আমাদের বিশেষ নজরদারি থাকবে। আমরা সিনিয়র অফিসাররাও সড়কে দাঁড়াব।

রমজানে অভিজাত পাড়া গুলশান-বনানীর অলিগলিসহ সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। এর মধ্যে অধিকাংশই ব্যক্তিগত পরিবহন। এ বিষয়ে গুলশান ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানে যানজট কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় ইফতারের আগে। ওই সময় যেন সবাই একযোগে রাস্তায় নামে। যে কারণে চেষ্টা সত্ত্বেও চাপ থেকে যায় সড়কে। এবার আমাদের চেষ্টা থাকবে সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে হলেও এ সময় সড়ক সচল ও গতিশীল রাখা।

কড়াই, হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে সড়কে ইফতারসামগ্রী তৈরি ও বিক্রি বন্ধে এবার বিশেষ নজর থাকবে বলে জানান এ উপ-কমিশনার। বলেন, ‘এবারের ক্রাইম কনফারেন্সে ডিএমপি কমিশনার ফুটপাত খালি রাখার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষ করে বিকেল থেকে হাঁড়ি-পাতিল আর কড়াই নিয়ে অনেকে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ইফতার তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন। সেটা কোনোভাবে হতে দেয়া হবে না।’

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের চেষ্টা থাকবে সড়ক সুশৃঙ্খল রাখা। মানুষকে হয়রানি ও ভোগান্তিমুক্ত রাখতে ফুটপাত-সড়ক দখল করতে দেব না।

তিনি বলেন, যেখানে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে সেখানে আমরা কিছু করতে পারছি না। কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আমরা অনেকবার অনুরোধ করেছি। কারণ, মানুষের অনেক কষ্ট হয়। যেমন- মহাখালী থেকে গুলশান সড়কে ডিএনসিসির উন্নয়ন কাজ চলছে। সেই কাজ যেন দ্রুত শেষ হয় সেজন্য আমরা সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতা চেয়েছি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মা‌লিক স‌মি‌তির সাধারণ সম্পাদক ও এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনা‌য়েত উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজানে ঢাকার সড়ক স্বস্তিদায়ক করতে ডিএমপিকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। তারা যে নির্দেশনা দেবেন সেটাই আমাদের নির্দেশনা। অবৈধ পার্কিং, ফিটনেসবিহীন গাড়ি এবং লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে পুলিশ যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে। এ ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স থাকবে।  

 

এএল/

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ