প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩, ০৬:৫১ পিএম
রোজা শুরুর আগেই কাঁচাবাজারে আগুনের আচঁ পাওয়া যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ রমজান মাস কিভাবে পার করবেন এ নিয়ে মহাসঙ্কটে রয়েছেন। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রমজানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। প্রকারভেদে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে বহুগুন। মাছ মাংস লাগাম ছাড়া। খেজুর, ছোলা, মুড়ি, বেসন, চিনি-গুড়সহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে কোনো কোনো জিনিসের দাম শতভাগ বেড়েছে।
ইফতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে খেজুর। সারা বছর যে পরিমাণ খেজুর বিক্রি হয়, তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় এ মাসেই। খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় ৫০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। অন্য ফলও আইটেমপ্রতি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, সবুজ আপেল গত রমজানে ছিল ১৮০ টাকা কেজি। এবার তা ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আনার ৪৫০, সবুজ আঙুর ২৫০-২৭০, পেঁপে ৮০-৯০, নাশপাতি ৩০০-৩২০ টাকা কেজি। তরমুজ কেজিপ্রতি ৫০-৬০, মাল্টা ২৪০-৫০, কমলা ২৪০-৩০০, লেবু হালি ৩০-৫০, আনারস পিস প্রতিটি ৫০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খেজুরের বাজারে দেখা যায়. মমতাজ-মরিয়ম জাতের খেজুরের কার্টন ১ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফরিদা জাতের খেজুরের কার্টন ৮০০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। ডালবারালি খেজুর ৪৫০, বরই খেজুর ৩০০, জিহাদি ১৮০, কামরাঙ্গা ৪০০, মিফজল বড় সাইজ ১২০০, কালোটাও ১২০০, আম্বার ৯০০, নাগাল ৪০০, মিডিয়াম ১০০০, মাজদুল ৯০০, মরিয়ম ৯০০, সুগাই ৫০০, তিউনিসিয়া ৩৫০, আজোয়া ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মমতাজ-মরিয়ম, মাবরুম, জাহেদি, কালমিসহ সব খেজুরের দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
ছোলা, বেসন ও খেসারি ডালের দাম এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ছোলা কেজিপ্রতি ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ভালো মানের ছোলা ১১০ টাকা কেজি। মুড়ি ৮০, বেসন ১৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি ১১৫ টাকা। একই অবস্থা সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেও। খোলা সয়াবিন ১৬৭-১৭২ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত রমজানে ১৪০ টাকার কমে পাওয়া যেত। বোতলজাত সয়াবিন ১৮৫ থেকে ১৮৭ টাকা লিটার কিনতে হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম এযাবৎকালে সর্বোচ্চ। পাইকারি ও খুচরা মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। আর সোনালি মুরগির ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খন্দকার মাসুদ নামে এক ক্রেতা বলেন, এখনই খেজুরের দাম কয়েকগুণ হয়েছে। ভেবেছিলাম এখন কিনলে হয়তো কম দামে খেজুর কিনতে পারব। এসে দেখি দাম বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়েই বেশি দামে খেজুর কিনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। মো. তকিউদ্দিন নামে এক খেজুর বিক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা বেশি থাকায় নানা অজুহাত দেখিয়ে খেজুরের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। সরকার যথাযথ মনিটরিং করে না। সিন্ডিকেট নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়ায়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাঁচ বছর আগে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আর এখনকার ক্রয়ক্ষমতার অনেক পার্থক্য। মানুষের সেই পরিমাণ বেতন বাড়েনি। রমজান এলে মানুষের খরচ বৃদ্ধি পায়। রোজগারের তুলনায় খরচ অনেক বেড়ে গেছে। নিম্নমধ্যবিত্তরা এতে বিপাকে পড়েছে। যারা ৬০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে তারাও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। যথাযথ মনিটরিং করা উচিত। সরবরাহ যেন ঠিক থাকে সে জন্য যথাযথ বাজার মনিটরিং করা উচিত।
এএল/