সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পুরনো মেশিনের কারণেই সরকারি পাটকলগুলোতে লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
রোববার (৫ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান।
সোমবার (৬ মার্চ) জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে এ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় বস্ত্র ও পাটসচিব আব্দুর রউফ উপস্থিত ছিলেন। ‘পাট শিল্পের অবদান-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ - এ প্রতিপাদ্য নিয়ে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ খাতে অবদানের জন্য এদিন ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবে সম্মামনা ও পুরস্কার।সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, সারা পৃথিবীতে প্লাস্টিকের ঊর্ধ্বগতির কারণেই পাকিস্তান আমলে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশে পাটের যে গতি ছিল, সেটা ম্লান হতে হতে আমরা এক সময়ে লোকসানের দিকে চলে এসেছি। মূলত প্লাস্টিকের কারণেই এটি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক আসার পর সব ব্যাগ প্লাস্টিকেই তৈরি হওয়া শুরু হয়। সারা পৃথিবীতেই এটি হয়েছে। অথচ বিশ্বজুড়ে আমাদের পাটজাতপণ্য রফতানি হতো। সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসতো পাটপণ্য দিয়ে। কিন্তু প্লাস্টিক আবিষ্কারের পর তা কমে যায়।
মন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু সারা পৃথিবীতে প্লাস্টিকের পণ্যের কারণে যে দূষণ তৈরি হয়েছে, তাতে অনেক দেশই এখন এ পণ্য ব্যবহার বর্জন করছে। এতে পাটপণ্যের গতি আবার বেড়েছে। এতে যে মিলগুলোতে আমরা লসে ছিলাম, তার পাশাপাশি প্রাইভেট মিলও চালু হয়েছে। ২০০টির মতো প্রাইভেট মিল রয়েছে, তারা তাদের মতো করে চালু করেছে। আমাদের সরকারি মিলও চালু হয়েছিল; কিন্তু সরকারি মিলগুলো লাভজনক করতে পারিনি। কারণ আমাদের মেশিনগুলো পুরনো ছিল। কিন্তু প্রাইভেটগুলোতে নতুন নতুন মেশিন এনে তারা লাভবান হয়েছে। এতে পাটপণ্যে আবার ঊর্ধ্বগতি চলে এসেছে।’
সোনালি ব্যাগ নিয়ে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, চার-পাঁচ বছর হলেও সেটি মার্কেটে আসছে না। এ ব্যাগের ভবিষ্যৎ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মার্কেটিং করতে না পারব, ততদিন বাণিজ্যিকভাবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে আগ্রহ দেখাবে না। এটির খরচ দর কষাকষির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে না। আমরা এখন খরচ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন মিলগুলোর সঙ্গেও আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা যখন প্লাস্টিক পণ্যের সঙ্গে খাপ-খাইয়ে মার্কেটিংয়ে দিতে পারব, তখন প্রাইভেট মিলগুলোও তা উৎপাদনে যেতে পারবে। কিন্তু আমরা খরচ কমিয়ে আনতে পারছি না।’
তিনি বলেন, সোনালি আঁশ পাটের সাথে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস। পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে পাটের গুরুত্ব বিবেচনায় পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে সোনালি আঁশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরার লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও জাতীয় পাট দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, আগামী ৬ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠান এবং মতিঝিলস্থ করিম চেম্বারে বহুমুখী পাটপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করা হবে। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা ও বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, পাটখাত উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম, পাটবীজ উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন, প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ বছর পাট দিবসে মোট ১১টি ক্যাটাগরিতে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও পাট সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের শুভেচ্ছা স্মারক দেয়া হবে।
আরিয়ানএস/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন