• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

ব্রয়লার মুরগিতে মিলেছে ক্ষতিকর চার ভারী ধাতু

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩, ০৮:২২ পিএম

ব্রয়লার মুরগিতে মিলেছে ক্ষতিকর চার ভারী ধাতু

ব্রয়লার মুরগি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড়ে অতিরিক্ত মাত্রার ক্ষতিকর নিকেল, ক্রোমিয়াম, সীসা ও আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর চারটি ভারি ধাতুর উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে, এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় এ বক্তব্য উঠে এসেছে। এ অবস্থায় ব্রয়লার মুরগির অর্ধ সিদ্ধ মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এ মুহূর্তে বেশি ভূমিকা রাখছে ব্রয়লার মুরগি। ক্রয় ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে হওয়ায় বেড়েছে এর চাহিদাও। তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণায় মিলেছে উদ্বেগজনক তথ্য। ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড়ে মিলেছে অতিরিক্ত মাত্রার ক্ষতিকর নিকেল, ক্রোমিয়াম, সীসা ও আর্সেনিক।
বিষাক্ত পোলট্রি খাদ্যে ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য। পোলট্রি মুরগিতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন। যা শরীরের জন্য খুব দরকার। কিন্তু সেই পোলট্রি মুরগির খাবারে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত বর্জ্য। এতে মুরগির মাংস ও ডিম দুটিই ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।  
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, বিশ্বের সকল দেশে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর নিরাপদ খাদ্য খেলে শরীর ভালো থাকে। মেধার বিকাশ ঘটে এবং কাজ-কর্মে সক্ষমতা বাড়ে। তবে আমাদের দেশে খাবারের নামে বিষ খাচ্ছি। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে এসব ক্ষতিকর ভারী ধাতু পোলট্রি খাদ্যে মেশাচ্ছে। পোলট্রি মুরগির খাবারে ভারী ধাতু মেশানো অমানবিক। তবে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিলে ক্ষতির দিকটা কমবে।


বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের সব দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আলাদা ব্যবস্থা থাকে। তারা নিয়মিত মনিটরিং করে সবকিছু। মানুষের জীবন রক্ষার্থে ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা বিভাগ অতীব জরুরি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, খাবার থেকে মুরগির শরীরে ঢুকছে এই ধাতু। ক্ষতিকর এই ধাতুর বিষয় না জেনেই প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ খাচ্ছে এই মুরগি। অতিমাত্রার এসব ভারী ধাতু মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এ অবস্থায় অর্ধসিদ্ধ মুরগির মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তাশরিফ আহমেদ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ‘অ্যাসেসমেন্ট অব হেভি মেটালস ইন ব্রয়লার চিকেন অ্যান্ড ইটস সোর্স ট্র্যাকিং ইন খুলনা সিটি করপোরেশন এরিয়া’ শিরোনামে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেন। ঐ গবেষণার জন্য তিনি নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজার, রূপসা ঘাট, বয়রা বাজার, নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার ও নিরালা বাজার থেকে ব্রয়লার মুরগি কিনে ল্যাবে নিয়ে যান। এরপর ল্যাবে ব্রয়লার মুরগির মাংস ও হাড় নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণাটির উদ্ধৃতি দিয়ে তাশরিফ আহমেদ জানান, ভারী ধাতু নিকেলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রা প্রতি কেজিতে শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু মাংসে পাওয়া গেছে ১২৮ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ৭৯ মিলিগ্রাম। ক্রোমিয়ামের অনুমোদিত মাত্রা ১ মিলিগ্রাম হলেও পাওয়া গেছে মাংসে ১২ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ১০ দশমিক ৪৫ মিলিগ্রাম। সিসার অনুমোদিত মাত্রা ০ দশমিক ১ মিলিগ্রাম হলেও মাংসে পাওয়া গেছে ১৮ দশমিক ৫২ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ৩ দশমিক ৭২ মিলিগ্রাম। আর্সেনিকের অনুমোদিত মাত্রা ০ দশমিক ১ মিলিগ্রাম হলেও মাংসে পাওয়া গেছে ০ দশমিক ৪৩ মিলিগ্রাম ও হাড়ে ০ দশমিক ৩৭ মিলিগ্রাম। ঐ শিক্ষার্থী বড়বাজার ও অন্য কয়েকটি স্থান থেকে ১৫টি কোম্পানির পোলট্রি ফিড (মুরগির খাবার) সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষা করেন। তাতে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে নিকেলের মাত্রা ১ দশমিক ৯৩ মিলিগ্রাম, ক্রোমিয়ামের মাত্রা ৬০ দশমিক ৫৮ মিলিগ্রাম এবং সীসার মাত্রা ৫ দশমিক ৮৬ মিলিগ্রাম।
এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ব্রয়লার মুরগি যদি ভালোভাবে সিদ্ধ, ফ্রাই অথবা রান্না করে খাওয়া হয় তাহলে ঝুঁকি থাকে না। সেজন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে অর্ধসিদ্ধ মাংস না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা তিনটি গবেষণায় তেলাপিয়া মাছ, চিংড়ি ও ঘেরের পাশের সবজিতে মিলেছে ক্ষতিকর এসব ভারি ধাতু।


আরিয়ানএস/

আর্কাইভ