• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

এসপি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩, ০৪:০০ পিএম

এসপি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী সাময়িক বরখাস্ত

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী (ফাইল ছবি)

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পুলিশ সদর দপ্তরের সাবেক সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি–লজিস্টিকস), রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া পিএসটিএস-এ দায়িত্বরত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খানের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‍‍`পুলিশ অধিদপ্তর ঢাকার সাবেক এআইজি (সাপ্লাই) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড, নৈতিকস্খলন, শিষ্টাচার বহির্ভূত কার্যকলাপ ও অসদাচরণের অভিযোগের মাত্রা এবং প্রকৃতি বিবেচনায় তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।‍‍`

এতে আরও বলা হয়, ‍‍`সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি পুলিশ অধিদপ্তর ঢাকায় সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।‍‍`

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে এক নারীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, পরে সন্তানসম্ভবা ওই নারীকে বিয়ে ও সন্তানকে অস্বীকার এবং ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

গত বছরের মার্চ মাসে মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে তাঁর সাবেক স্ত্রী আয়শা ইসলাম ওরফে মৌ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে ফেসবুকে আয়শার পরিচয় হয়। সম্পর্কের প্রথম থেকে আয়শাকে দেখা করতে প্রলুব্ধ করেন মহিউদ্দিন ফারুকী। এরপর তিনি বিভিন্ন অজুহাতে আয়শার বাসায় যাতায়াত করেন। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আয়শাকে বিয়ে করতে চান তিনি। পরে আয়শার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে আয়শা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

আয়শাকে ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানোর কথা বলে মহিউদ্দিন ফারুকী গর্ভপাত করানোর ওষুধ খাইয়ে দেন—এজাহারে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে। ওষুধটি গর্ভপাতের ছিল বলে মহিউদ্দিন ফারুকী পরে আয়শার কাছে স্বীকারও করেন। এ সময় আয়শা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান মহিউদ্দিন ফারুকী। সেখানে গর্ভপাত করার সময় স্বামীর নামের জায়গায় মহিউদ্দিন ফারুকী সই করেন। কিন্তু গর্ভপাতে আয়শার সম্মতি ছিল না।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গর্ভপাতের পর মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন আয়শা। তবে পরে মহিউদ্দিন ফারুকী কৌশলে তাঁর সঙ্গে আবারও সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং সহকর্মীদের কাছে আয়শাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আয়শাকে বিয়ে করার কথা বলে চাপের মুখে তাঁর স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য করেন মহিউদ্দিন ফারুকী। ১৬ এপ্রিল আয়শা জানতে পারেন, তিনি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় মহিউদ্দিন ফারুকী আবারও আয়শার গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করেন।

ভ্রূণ হত্যা করতে না দেওয়ায় মহিউদ্দিন ফারুকী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং আয়শা ও গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে। এতে আরও বলা হয়েছে, আয়শা আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে পরে মহিউদ্দিন ফারুকী বিয়ে করতে সম্মত হন। শেষমেশ ২০২১ সালের ৬ জুন মুসলিম শরিয়াহ আইন অনুযায়ী আয়শাকে বিয়ে করেন তিনি।

এরপর আয়শার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান মহিউদ্দিন ফারুকী। গর্ভের সন্তানকেও হত্যার চেষ্টা করেন ফারুকী। ওই বছরের ২৫ আগস্ট আয়শা নিজের ও গর্ভের সন্তানের জীবন রক্ষার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে আবেদন করেন। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছেও আবেদন করেন।

এর আগেই আয়শাকে তালাক দেন মহিউদ্দিন ফারুকী। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর আয়শা কন্যাসন্তান জন্ম দেন। সন্তানের ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে পৃথক একটি মামলা করেন আয়শা। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সুবিচার চেয়ে আয়শার আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর এক উপমহাপরিদর্শককে (ডিআইজি) এ ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও এতদিন তা চাপা পড়ে ছিল।

আর্কাইভ