প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৩, ০১:১০ এএম
জুয়ার অ্যাপকে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রমোট করার জন্য ইউটিউবার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের কাজে লাগাচ্ছে এজেন্টরা। এজন্য একেক ভিডিওর জন্য ৫০ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে তাদের। জুয়ার অ্যাপকে প্রমোট করার জন্য ইউটিউবার প্রত্যয় হিরন গ্রেপ্তারের পর অনেক ইউটিউবার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সতর্কও হয়েছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বেআইনী যে কোন বিষয় প্রমোট করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জুয়ার সাইট চালানো অনেকেই ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এ বিষয়ে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অনেক ইউটিউবার ও ফেসবুক কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা ভিডিওতে বেটিং অ্যাপ (জুয়ার অ্যাপ) নিয়ে কথা বলেন। জুয়ার অ্যাপে দিয়ে নানা আয়ের বিষয়ে চটকদার কথা বলেন। যে সকল অ্যাপের বিষয়ে তারা কথা বলেন সেই সকল অ্যাপের এজেন্ট থেকে প্রতি ভিডিও প্রতি ৫০ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত পান। ফেসবুকে বেটিং অ্যাপের বিজ্ঞাপণের চাইতে ইউটিউবারদের ভিডিওতে বেশি ভিউ আসায় এজেন্টরাও ঝুঁকে তাদের দিকে।
বিভিন্ন জুয়ার সাইট যেমন ওয়ান এক্সবেট, টুটুবেট, বেটউইনার, ট্রিপল এইট ক্যাসিনো, মোস্টবেট, জিজিবেট, লফট ক্যাসিনো, ওয়ান উইন, উইলিয়াম হিল, লিওভেগাস ক্যাসিনো, মিস্টার গ্রিন, বেটওয়ে, পোকার্স স্টার, বেট৩৬৫, পিক্স বেট, বিট স্টারজ, ভাভাডা, পার্টি ক্যাসিনো, ক্যাসিনো এক্স, রিওবেট, রিওবেট, জয় ক্যাসিনো,বিউইন, রক্স, ফার্স্ট পে, উইল্ডজ, বব, ল্যঅড ব্রকস, ক্যাসোমো, রিজক, অ্যপ্লাই ক্যাসিনো এবং সোলের দেশীয় এজেন্টরা তাদের লোভনীয় অফার দেয় ইউটিউবারদের। অনেক ইউটিউবার লোভে পড়ে তারা সেটি প্রমোটও করে।
সম্প্রতি ভিডিও এবং নাটকে অনলাইন জুয়ার প্রচারণার দায়ে জনপ্রিয় ইউটিউবার ও অভিনেতা প্রত্যয় হিরণ ও তার দুই সহযোগীকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অনলাইন জুয়ার আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইটের প্রচারণা করে ভিডিও বানাতেন তারা।
এছাড়া এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশি জুয়ার প্ল্যাটফর্মের বিজ্ঞাপন চালানোর অভিযোগও ছিল তাদের বিরুদ্ধে। শেষটা এমন হয়, ওয়ান সাইডেড লাভ, মায়ার ওপরে তুমি, মিস ক্রাশ নাটক ও জনপ্রিয় ধারাবাহিকে বদমাশ পোলাপাইনের অন্যতম অভিনেতা প্রত্যয়।
জানা যায় নাটকের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপনী সংলাপ চলতে দেখা যায়। এর ধারাবাহিকতায় দেশের বিজ্ঞাপনের বাজারে ইউটিউব-ফেসবুকের ভিডিওতে নতুন এই ধারার প্রচলন শুরু হয়েছে। ৪৫ লাখ সাবস্ক্রাইবারের ‘আজাইরা লিমিটেড’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে বেশ কিছুদিন ধরে তাদের ভিডিওতে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।
ডিবি জানায়, প্রত্যয় হিরণরা বিশ্বব্যাপী জুয়ার সাইট ওয়ান এক্সবেট, বাবুএইটিএইট, ক্রিকেক্স নামের জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন বাবদ ভিডিওপ্রতি এক লাখ ১০ হাজার টাকা করে নিতেন। ভারতীয় একটি এজেন্সির সঙ্গে বিজ্ঞাপনের জন্য এজেন্ট হয়ে কাজ করত আবদুল হামিদ নামের একজন।
ফেসবুক পেজ সরল ভাইয়ের অ্যাডমিন এমএইচ ফয়সাল বলেন, এ ধরনের অফার তিনিও পেয়েছিলেন। প্রতিটি ভিডিওর জন্য ৮০ হাজার টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়। তারা হোয়াটসঅ্যাপে নক করে বেটিং অ্যাপের প্রমোটের কথা জানায়। তিনি বলেন, প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি পরে দেখি এটি আসলে জুয়ার সাইট। পরে আর আমি রাজি হইনি।
তিনি অবশ্য বলেন, এ ঘটনায় অনেকেই সতর্কও হয়েছে। এটি অনেকের জন্য শিক্ষনীয় ছিল। তবে এ জুয়ার অ্যাপের যারা এজেন্ট তাদেরকে ধরলেই এটি কমে যাবে।
এদিকে বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ বা পাবলিক গ্রুপ খুলে গুগল প্লের অ্যাপস এর মাধ্যমে অনলাইনে লোভনীয় অফারে প্রচার করা হচ্ছে নানা রকম জুয়া ও গেইম খেলার বিজ্ঞাপন। খেলোয়াড়রা দিনে দিনে কোটিপতি হয়ে যায় বলেও প্রচার করা হয় এসব বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের নামি-দামি গণমাধ্যমের লোগো এবং মন্ত্রীদের ছবিও ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে টাকার নেশা ও অন্যদিকে খেলার নেশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত ও ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে যুব সমাজ।
ফেসবুকে প্রবেশ করলে দেখা যাচ্ছে নানা কৌশলে লোভনীয় অফারে মানুষের মনকে খেলার প্রতি আকৃষ্ট করতে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। বিভিন্ন টেলিভিশনের সংবাদকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নকল করে এসব খেলায় প্রচুর অর্থ পেয়েছেন মর্মে ভুয়া খবর প্রচার করা হচ্ছে। একইভাবে বহুল প্রচলিত পত্রিকার লোগো ব্যবহার করে লোভনীয় খবর প্রচার করে খেলায় অংশ নেওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। এসব অফারের বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মোমেন এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থের লোভ ও নেশার কবলে এসব অফারে আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের অনেকেই তাদের অফারে পা দিয়ে সর্বশান্ত হওয়ার মত ঘটনা ঘটছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে নতুন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া। এক ধরণের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে।
ঢাকা মহানগর ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপকমিশনার তারেক বিন রশিদ বলেন, প্রত্যয় হিরনসহ তার সহযোগীরা অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল। তাদের গ্রেপ্তার করে আমরা জানতে পারি, অনলাইন জুয়াড়িরা দেশের বাইরে থেকে এসব পরিচালনা করে। ভারতীয় এজেন্টদের মাধ্যমে জনপ্রিয় ইউটিউবার বা অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন দেয় তারা।
ইমরান আলী/