প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩, ১১:০৮ পিএম
হজ নিবন্ধনের সময় আরেক দফা বাড়াতে যাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এদিকে দুই দফা সময় বাড়িয়ে মাত্র ১৯ হাজার হজ যাত্রী নিবন্ধন করা হয়েছে।
এবার হজ যাত্রায় সরকারি ভাবে জনপ্রতি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর বেসরকারিভাবে এই খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। অর্থাৎ এ বছর সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়েই দেড় লাখ বেড়েছে প্যাকেজ ফি। আর এ কারণেই অনেকে হজে যাওয়ার ইচ্ছা থাকার পরও নিবন্ধন করছেন না। ফলে পাঁচ দিন সময় বাড়িয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিলো ধর্ম মন্ত্রণালয়। তাতেও সারা না পাওয়ায় আরেক দফা সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
করোনা মহামারির পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু খরচ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় হজে গমনেচ্ছুরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে প্রতি বছর যেখানে নিবন্ধনের জন্য মানুষ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে থাকে। সেখানে এবার সময় বাড়িয়েও হজ যাত্রী মিলছে না।
বরাবরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারিভাবে আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রতি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর একদিন পর ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজের থেকে ১০ হাজার টাকা কমে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই গত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিলো ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
প্যাকেজ ঘোষণার পর, গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রাক নিবন্ধিত গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন শেষ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে আশানুরূপ নিবন্ধন না করায় ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ দিন সময় বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সূত্রে জানা গেছে, হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরের দিন থেকে অনেকে নিবন্ধন শুরু করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ হাজার জনের কোটার বিপরীতে সরকারিভাবে ৭ হাজার ২৭০ জন আর বেসরকারিভাবে ১৯ হাজার ৬১৭ জন হজ যাত্রী নিবন্ধন করেছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধনের সময় আরও বাড়ানো হতে পারে। আর তা হতে পারে ১০ মার্চ পর্যন্ত।
সূত্র মতে, চলতি বছর হজের জন্য কোরবানির খরচ ছাড়া প্যাকেজ ধরা হয়েছে সরকারিভাবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা আর বেসরকারিভাবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। কোরবানিসহ ওই ব্যয় সাত লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যা মধ্যবিত্তদের জন্য বহন করা কষ্টসাধ্য। এছাড়া হজে খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া।
বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, এবার হজের খরচ বেড়েছে নজিরবিহীন। নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশি মানুষ হজে যেতে প্রাক নিবন্ধন করেন, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ধর্ম মন্ত্রণালয় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে, হয়তো আবারও বাড়াবে। তাতে কোনো লাভ হবে না, যদি খরচ না কমায়। এবার খরচটা অতিরিক্ত।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশস অব বাংলাদেশ হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘করোনার কারণে টানা দুইবছর হজযাত্রা বন্ধ ছিলো। এবার হজ পালনের সুযোগ পেলেও খরচ বেড়ে গেছে অত্যাধিক। ডলার আর তেলের দামের অজুহাত দেখিয়ে খরচ প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ জ্বালানির দাম সেভাবে বাড়েনি। হাব সবসময় হজের খরচ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। আমরাও চাই হজের খরচ পুনর্বিবেচনা করা হোক।’
উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সাজেদ/