প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০৩:১৩ এএম
২৫ ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের সেই কালো দিন। ১৪ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সাবেক বিডিআর ও বর্তমান বিজিবি সদর দফতরে ঘটে এক মর্মান্তিক নৃশংস ঘটনা।
তখন সকাল ৯ টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে একদল বিদ্রোহি বিডিআর সৈনিক ঢুকে পড়ে। সিপাহী মঈন নামে একজন বিডিআর সদস্য মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় ইতিহাসের সেই নৃশংস ঘটনা। বিডিআরের বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি করে। এ সময় তারা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানায় সেদিন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা যে তান্ডব চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর কোনও বাহিনীর বিদ্রোহের ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
২৫ ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের সেই কালো দিন।
১৪ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে বিদ্রোহী বিডিআর।
হয়েছে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলা।
এ ঘটনার রায়- উচ্চ আদালতে মৃত্যুদন্ডের আপিল শুনানির অপেক্ষায়।
এ মাসে থাকে শোকাবহ দিবসের কর্মসূচি।
স্বজনদের আক্ষেপ, হত্যার বিচার পেলাম না : প্রতিবছর এই দিবসটি স্মরণ করতে এসে নিহতদের স্বজনরা বনানীর সামরিক কবরস্থানে শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তাদের একটাই আক্ষেপ, ‘আমরা আর কি চাইবো? আজও হত্যার বিচার পেলাম না। এটাই চাইবো হত্যার বিচারটা অন্তত সুষ্ঠুভাবে হয়। মৃত্যুর আগে শুনে যেতে পারলে তাতে শান্তি পেতাম। আজও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়নি। বিচারের রায় কার্যকর করা হলে অন্তত আত্মা শান্তি পাবে।’ অনেক স্বজনরা বলেন, ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড যাদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত হয়েছে সেসব কুশীলব বা ষড়যন্ত্রকারীরা পর্দার আড়ালেই থেকে গেল। তারা কারা এখনও তা স্বজনরা জানতে পারেননি। আমরা চাই বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।’
উচ্চ আদালতে মৃত্যুদন্ডের আপিল শুনানির অপেক্ষায় : হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাস ও সাজা কম পাওয়া আসামিদের মৃত্যুদন্ড চেয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধরনের আপিলের সংখ্যা ১৩৯ টি। অন্যদিকে, যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া প্রায় ৩শ আসামি খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের এসব আপিল এখন চুড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। পরে এই আপিল দায়েরের বিষয়টি ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় মেমো অব আপিলের মাধ্যমে আপিলের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করে আসামি পক্ষ। প্রধান বিচারপতি আসামি পক্ষের আবেদন মঞ্জুর করায় অন্যান্য আসামীদেরকে পূর্ণাঙ্গ পেপারবুক ছাড়াই আপিল দায়ের করার সুযোগ হয়েছে। ফলে তাদের কাউকে ১০ লাখ টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা ব্যয় করে আপিল দায়ের করতে হবে না। তারা বড় অংকের অর্থ খরচের হাত থেকে বেঁচে গেছেন বলে জানিয়েছেন আসামী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী এম আমিনুল ইসলাম।
মামলার বিচার কার্যক্রম কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে, জানতে চাইলে মামলার পাবলিক প্রসিকিউশন (পিপি) মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রায় ১২ শত সাক্ষী রয়েছেন। সবার সাক্ষ্য গ্রহণের প্রয়োজন নেই। এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় আসামী পক্ষ যদি সহায়তা করে, তাহলে এ বছরেই এই মামলার রায় দিতে পারবে আদালত।
এছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সকল স্থাপনায় বিজিবি পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবি’র সকল সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবে।
সাজেদ/