তেলেগুদের কলোনিজুড়ে জমে আছে ময়লা পানি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কোনো রকম নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না করে ১০-১৫ ফুট নামে খালি জমি দিয়ে ভেঙে ফেলা হচ্ছে রাজধানীর ধলপুরের ১৪ নম্বর আউটফলে বসবাস করা তেলেগু কলোনি। আজ বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম তেলেগু সম্প্রদায়ের লোকদের রাতের মধ্যে কলোনি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার কলোনি উচ্ছেদ করার কথাও জানান তিনি। এর আগে করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২২টি পরিবারের জন্য পাশে উচ্ছেদ করা জমিতে খুঁটি লাগিয়ে প্রতিটি পরিবারের জন্য ক্রমিক অনুযায়ী জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়।
তেলেগু সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন, আমাদের কলোনিতে এখন হাঁটু সমান ময়লা পানি জমে আছে। এই অবস্থায় মালামাল নিয়ে ঘর ছেড়ে যাওয়া কষ্টকর। তা ছাড়া নতুন জায়গায় মাটি ছাড়া কিছু নেই। বিদ্যুৎ, পানিসহ বাথরুমের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। সেখানে গিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়তে হবে বলে জানান কলোনির বাসিন্দারা। তেমনি কলোনির ভেতরে থাকা একমাত্র স্কুলটি ভেঙে ফেলা হলে ২০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে।
এই প্রেক্ষাপটে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কলোনিতে থাকার অনুমতি দিতে অনুরোধ জানান। সেই সঙ্গে নতুন ঘর তোলার জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান তারা। যদিও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসব বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।
তেলেগু সম্প্রদায়ের লোকজন জানান, তাদের আবেদনের ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোনো কর্ণপাত না করে বলেন, আমাকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা আমি আপনাদের বলেছি। এর বাইরে কোনো বিষয়ে আমার কাছে সদুত্তর নেই।
সন্ধ্যায় কলোনিতে গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা পানির মধ্যে কেউ কেউ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ মন্দির ও গির্জার বারান্দায় বসে অঝোরে কাঁদছেন। নতুন জমিতে কীভাবে বসতি গড়ে তুলবেন—এ চিন্তায় কপালে ভাঁজ প্রতিটি মানুষের। নিপা দাস বলেন, ‘হাতে টাকা নেই। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা কীভাবে ঘর ভেঙে নতুন করে ঘর তুলব। পূর্ণিমা দাস বলেন, সেখানে গিয়ে আমরা কীভাবে বাঁচব। একটু খাওয়ার পানিরও ব্যবস্থা নেই। এরকম শাস্তি দেওয়ার চেয়ে আমাদের মেরে ফেলা হোক।’
এদিকে সন্ধ্যায় দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব তলেগু কলোনির একটি প্রতিনিধি দল ডেকে এনে নগর ভবনে কথা বলেন। বৈঠক শেষে তেলেগুরা জানান, বৈঠকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বলেন, ১২২ জন নয় ২২৭ জনকে অস্থায়ী জমিতে ঘর করার জায়গা দেওয়া হবে। আগামীতে স্থায়ী আবাসন করে দেওয়ার কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আস্তে আস্তে আপনারা নিজ খরচে নতুন জায়গায় চলে যান। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, পানি লাইনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নোট পাঠানো হয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে ভারতের তেলেঙ্গু রাজ্য থেকে এ অঞ্চলে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য তেলেগু সম্প্রদায়কে আনা হয়েছিল। এদের সবাই জাত মেথর হিসেবে পরিচিত। একপর্যায়ে তাদের সবাইকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ছয় জুলাই এরশাদ সরকার তেলেগুদের এই কলোনি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়। সম্প্রতি কলোনিতে অবৈধভাবে বসবাস করা ৯টি বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ করা জমিতে গ্যারেজ বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
একই সঙ্গে তেলেগুদেরও উচ্ছেদের কথা করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর প্রতিবাদ জানায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী কাউকে জমি থেকে উচ্ছেদ করতে হলে পুনর্বাসনের বিধান রয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকেও তেলেগুদের আইনি সুরক্ষার কথা উল্লেখ করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
আরিয়ানএস/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন