• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
নতুন জঙ্গি সংগঠনের নায়েবে আমির সম্পর্কে যা জানা গেলো

নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণে নিযুক্ত ছিল মহিবুল্লাহ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৩, ০৯:০৩ পিএম

নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণে নিযুক্ত ছিল মহিবুল্লাহ

‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‍‍’র নায়েবে আমির শায়েখ মহিবুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হরকাতুল জিহাদেরই একটি অংশ হিসেবে যাত্রা নতুন এই সংগঠনের। নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও দাওয়াতে কাজে নিযুক্ত ছিল মহিবুল্লাহ। তথাকথিত হিজরতকারী ৬০ তরুণকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য তার কাছে বরিশালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে পাহাড়ি অঞ্চলে পাঠানো হতো তথাকথিত হিজরতে। 

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপি‍‍’র অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
নতুন জঙ্গি সংগঠন  ‍‍‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‍‍’র নায়েবে আমির শায়েখ মহিবুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে সিটিটিসির ইনভেস্টিগেশন টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজধানীর সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় তার হেফাজত থেকে ২টি মোবাইল এবং ১টি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

সিটিটিসি প্রধান ও ডিএমপি‍‍র অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার সংগঠনটির শুরা সদস্য ডা. শাকের ওরফে শিশির, পলাতক জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজসহ গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিস শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যায়। 
এ সময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কুকি-চীনদের বিদ্রোহী সংগঠন কেএনএফ (কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলতো। সেখানে তাদের সঙ্গে কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম ও অন্যান্য কুকি-চীন নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ‍‍‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‍‍’ নামে সংগঠনটির নামকরণ করা হয় এবং শুরা কমিটি গঠন করে। গ্রেফতার মহিবুল্লাহকে সংগঠনটির নায়েবে আমির হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। 
সিটিটিসি প্রধানের দাবি, গ্রেফতার মহিবুল্লাহ ক্যাম্পে অবস্থানের সময় সন্ধ্যার পর প্রশিক্ষণরত সদস্যদের বয়ান দিতেন। তার বয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্যদের জিহাদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা।


আসাদুজ্জামান বলেন, শায়েখ মহিবুল্লাহ পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থান করার পর ঢাকায় চলে আসেন এবং শুরা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এনক্রিপ্টেড চ্যাটের মাধ্যমে সমন্বয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
শুরা সদস্য ডা. শাকেরকে দাওয়াতি কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য শায়েখ মহিববুল্লাহকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সংগঠনের শুরা পর্যায়ের একাধিক সদস্যের সঙ্গে ঢাকা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জে সংগঠনের কার্যক্রম জোরদার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি একাধিক বৈঠকে অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় বিভিন্ন সময়ে আসা-যাওয়া করতেন এবং সেখান থেকে পেইনড্রাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন জিহাদি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তার ল্যাপটপে সংরক্ষণ করতেন। 
জিহাদ সংক্রান্ত বিষয়ে তার নিজস্ব লেখার খসড়া কপিও তার কাছে পাওয়া গেছে। ডা. শাকের সিটিটিসির হাতে গ্রেফতারের পরে শায়েখ মহিবুল্লাহ নিজেকে আড়াল করতে তার ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল ফোন নষ্ট করে ফেলেন।


প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ জানান, তিনি উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ‍‍‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‍‍’র নায়েবে আমির হিসেবে কথিত শুরা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তিনি ভোলার শায়েখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ জঙ্গি সংগঠন ‍‍‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া‍‍’র সার্বিক দায়িত্বে ছিল শামীম মাহফুজ। 
গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ চট্টগ্রামের হাটহাজারির আল জামেয়াতুল আহেলিয়া দারুল উলুম মইনূল ইসলাম মাদ্রাসার ছাত্র থাকার সময়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি) এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তৎকালীন হুজির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় কথিত জিহাদি ট্রেনিং গ্রহণ করেন। 
তৎকালীন হুজি নেতা মুফতি আব্দুর রউফ আফগানিস্তানসহ অন্যান্য জায়গায় জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে হাটহাজারি মাদ্রাসা ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত বক্তব্য দিতেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য সশস্ত্র জিহাদের ডাক দিতেন। সে সময় হুজির অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে শায়েখ মহিবুল্লাহ যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। 
প্রশাসনের নজরদারির কারণে হুজি-বি’র কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ায় মহিবুল্লাহ তৎকালীন হুজির সদস্যরা নতুন একটি প্লাটফর্মে জিহাদি কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেন। সেই লক্ষ্যে হুজির আরেক নেতা মইনূল ইসলাম ওরফে রক্সি তার সঙ্গে ২০১৭ সালে ভোলায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় হুজির অন্যান্য নেতারাও তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর থেকেই মইনূল ইসলাম রক্সি ও মহিবুল্লাহ‍‍’র মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেফতারের পর হুজির আরেকজন সদস্য রাকিবের সঙ্গে মহিবুল্লাহ‍‍’র যোগাযোগ তৈরি হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার কাজে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতে থাকে। 
এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ব্যক্তি শামীম মাহফুজ। তার নির্দেশে একটি কমিটি হয়। কমিটির প্রথম আমির ছিলেন রক্সি। রক্সি গ্রেফতারের পর আরেকজন আমির নিযুক্ত হন। শূরা কমিটির ৬ জন সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে আনিসুল ইসলাম তমালকে নতুন আমির নিযুক্ত ও শায়েখ মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়।

 

আরিয়ানএস/  এএল

আর্কাইভ