প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ০২:৫৪ এএম
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে আগেই। বেদিতে আঁকা হয়েছে আলপনা। নিজেদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে আনতে বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের সেই মহান ত্যাগকে স্মরণ করতে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। একুশের প্রথম পহরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে স্মরণ করা হয় মহান শহীদদের।
প্রতিবারে মতো এবারও শ্রদ্ধা জানাতে শিল্পীর রঙ-তুলি আর আল্পনায় সেজেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারা বছর যাচ্ছেতাই পরিবেশ থাকলেও ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এলাকাটি।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে আগেই। বেদিতে আঁকা হয়েছে আলপনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা মিনার প্রাঙ্গণ আলপনা এঁকে রঙের তুলিতে সাজিয়ে তুলেছেন। শহীদ মিনারের চারপাশের দেয়ালগুলোতেও রঙের আঁচড়ে বাহান্ন থেকে একাত্তরের গৌরবগাঁথা, উত্তাল দিনগুলোর চিত্রকর্ম আর কবি-সাহিত্যিকদের উক্তিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এদিকে শহীদ মিনারের চারপাশে আলোকসজ্জার পাশাপাশি পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পাশেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাদে তৈরি করা হয়েছে ঘোষণা মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ প্রাঙ্গণে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কন্ট্রোল রুম, ফায়ার সার্ভিস ও প্রাথমিক চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও সুষ্ঠুভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ সব মানুষই পাবেন।’
নিরাপত্তার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গভীরভাবে তদারকি করছেন। একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমেই অমর একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। সেজন্য সব আয়োজন ও সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
রাষ্ট্রীয় আচার অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করবেন।
২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচল ও সব ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাস বা আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবাইকে পলাশী ক্রসিং, এসএম হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। কোনোভাবেই অন্য কোনও রাস্তা ব্যবহার করে শহীদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে না।
শহীদ মিনার থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে দোয়েল চত্বরের দিকের রাস্তা অথবা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে বের হতে হবে। কোনোভাবেই প্রবেশের রাস্তা দিয়ে বের হওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
সোমবার বিকালে র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলেন, ‘জঙ্গি হামলার কোনও হুমকি নেই। তবে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে।’
তিনি আরও বলেন,‘শহীদ মিনারের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে র্যাবের বোম ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ সুইপিং দল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। শহীদ মিনারমুখী রাস্তার মোড়গুলোতে চেক পোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
শহীদ মিনারে আগত নারীরা যাতে ইভটিজিংয়ের শিকার না হন সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।
আরিয়ানএস/