• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

আলপনা ও বর্ণমালায় সেজে উঠছে শহীদ মিনার এলাকা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৩, ১২:২৫ এএম

আলপনা ও বর্ণমালায় সেজে উঠছে শহীদ মিনার এলাকা

যাদের হাতে রাঙায় শহীদ মিনার, স্মরণ করিয়ে দেয় শহীদদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

একদিকে বাংলা বর্ণমালা, অন্যদিকে আলপনা এমন অসংখ্য লেখা দেখা মিলছে কেদ্রীয় শহীদ মিনারের আশপাশের দেয়ালগুলোতে। কেউ ভাষা শহীদের ছবি আঁকছেন আবার কেউ বাংলা বর্ণমালা লিখছেন। লিখছেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ প্রভাতফেরির এমন বিখ্যাত গানও।
ভাষার মাসে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে অসংখ্য চিত্রকর্ম চোখে পড়ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায়।এছাড়াও নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছেন পুলিশ ও র‍্যাবের বিশেষ টিম।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঘটে গিয়েছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সালাম,বরকত, রফিক,জব্বার, শফিউরদের বুকের  তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেলাম মায়ের ভাষায় সর্বত্র কথা বলার অধিকার। সেই মহান ব্যক্তিদেরকে একুশের প্রথম প্রহরে স্মরণ করা হয়। এ জন্য প্রতি বছরই থাকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন ও প্রস্তুতি। 


এই আয়োজন ও প্রস্তুতির একটি চুম্বক অংশ হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আশপাশের দেয়ালগুলোতে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের কথা,তাদের নিয়ে কথা ও আন্দোলনের চিত্রায়ন। আর এই কাজের দায়িত্ব সবসময় পালন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা পরিবার। এই কাজকে তারা খুব উপভোগ করেন। একইসঙ্গে নিজেদের গর্বিত মনে করেন তারা। স্বেচ্ছা সেবার এই কাজে তাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আত্মিক প্রশান্তি বলে মনে করেন তারা।
সারা বছর  শহীদ মিনার ও তার আশ-পাশের এলাকার অবস্থা যাচ্ছেতাই হলেও এখন পেয়েছে ভিন্নরূপ। শহীদ মিনারের বেদিতে শোভা পাচ্ছে আলপনা, দেয়ালে দেয়ালে মনীষী, কবি ও সাহিত্যিকদের ভাষা আন্দোলন ও ভাষা নিয়ে রচিত বাণী। দেয়ালের গ্রাফিতিতে জীবন্ত হয়ে যেন সালাম, জববার,বরকতরা স্লোগান দিচ্ছেন ‘রাষ্ট্রভাষা! রাষ্ট্রভাষা!, বাংলা চাই! বাংলা চাই!’ পারিপার্শিক অবস্থা দেখে কারও কাছে হঠাৎ মনে হতে পারে যে, তিনি বায়ান্ন’র রক্তমাখা মিছিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছেন সবকিছু।
এমনই আবহ তৈরি হয়েছে শিল্পীদের হাত ধরে। বরাবরের মতোই কাজ করছেন তারা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে,শরীর ক্লান্ত হলেও মুখে নেই ক্লান্তি চাপ। তারা মনে করেন, এমন কাজে যুক্ত থাকতে পারাটাই সবচেয়ে বড় আত্মিক প্রশান্তি।
শহীদ মিনার এলাকায় কথা হয় এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে। দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতির মাধ্যমে ভাষা শহীদদের স্মরণ ও তাদের সে সময়ের ইতিহাস তুলে ধরতে প্রায় ১৭-১৮ বছর ধরে কাজ করছেন ইমরান মাহমুদ। তিনি বলেন, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন ও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের ইতিহাস তুলে ধরার মাধ্যমে তাদেরকে স্মরণ করা। এছাড়াও এর ইতিহাস মানুষকে জানানোর প্রয়াস হচ্ছে এটি। এত বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে সত্যি খুব ভালো লাগছে,যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। দেয়াল লিখনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে গর্বিত।’
দেয়াল লিখন ও সড়কে আলপনা আঁকার তত্ত্বাবধানে থাকা প্রাচ্যকলা বিভাগের শিক্ষক কান্তি দেব অধিকারী বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় যেকোনও কাজে জড়িত থাকতে পারা সত্যিই গর্বের ও আনন্দের বিষয়। আর সেটি যদি হয় শহীদ দিবসের মতো বিষয়, তাহলে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা এখানে বিভিন্ন মনীষীদের বাণী শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করছি, যাতে সবার মনে গেঁথে যায়। বিশেষ করে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে যেন খুব ভালোভাবে তা আকর্ষণ করে।’

 

আরিয়ানএস/

আর্কাইভ