ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আসন্ন রমজানে বিশেষ প্রোগ্রামে এক কোটির বেশি পরিবারকে ভিজিএফের আওতায় ১০ কেজি করে চাল দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সংবাদকর্মীদের এ তথ্য জানান খাদ্যমন্ত্রী।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দেয়া হবে। তিনি বলেন, আসন্ন রমজানে মানুষ চাল নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে না। একই সঙ্গে রমজানে বিশেষ প্রোগ্রামে ভিজিএফের আওতায় এক কোটির বেশি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
আমনের বাম্পার ফলনের কথা উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বোরোর বাম্পার ফলন আশা করছি। ফলে দেশে চাল আমদানির আর প্রয়োজন হবে না।’ খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে রমজান মাস, খাদ্য মন্ত্রণালয় মূলত রেশনিং, কাবিখা, টিআর, ওএমএস কর্মসূচির চাল বিতরণ করে থাকে। বিতরণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্ববৃহৎ বিতরণ ব্যবস্থা চলছে। ২ হাজার ৫০০ ডিলারের মাধ্যমে চাল ও আটা প্রতিনিয়তই বিতরণ চলছে। হিসাব অনুযায়ী, এ সময় ওএমএস বন্ধ থাকে। শুধু সিটিতে কিছু কার্যক্রম চলে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সিটি, জেলা-উপজেলা ও পৌরসভাগুলোতে চলছে। ওএমএসের আওতায় যারা নিম্ন আয়ের লোক, তারা ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে ৩ কেজি আটা পাচ্ছেন।’
আগামী ১ মার্চ থেকে ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি বছরে পাঁচ মাস চলে। মূলত মার্চ, এপ্রিল, মে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ওএমএসের চাল দেয়া হয়। আমাদের ওএমএসের আওতায় এক কোটির ওপরে পরিবার বছরজুড়েই ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা পাবে।’
সাধন চন্দ্র বলেন, ‘বেসরকারিভাবে আমাদের আমদানি খোলা রয়েছে। তবে চাল কম আসছে। কারণ, দেশে এখন প্রচুর চাল আছে। সরকারি মজুতেও প্রচুর চাল রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের বিতরণ যেমন অনেক বেশি, পাশাপাশি মজুতও সবচেয়ে বেশি রয়েছে।’
বর্তমানে ২০ লাখ ৩৩ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন বিতরণ করছি, তেমনি সংগ্রহও করছি। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টন চাল সংগ্রহ হচ্ছে। যদিও আমাদের ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে আমাদের ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। চুক্তি হয়েছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৩ মেট্রিক টনের।’
২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা প্রকাশ করেন খাদ্যমন্ত্রী। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধান সংগ্রহের জন্য সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়। কারণ, কৃষকরা যাতে মিলার, মজুতদার বা খরিদদারের কাছে প্রতারিত না হন। বাজারে দাম কম থাকলে কৃষকরা সরকারের কাছে বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন। এ বছর সরকারি মূল্য থেকে বাজারে মূল্য বেশি থাকায় কৃষকদের সরকারের কাছে ধান দেয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। কারণ, কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মূল্য বাজারেই পাচ্ছেন।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দেশনার কারণে আমাদের দেশে বৈশ্বিক সংকট তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি এবং ফেলতে পারবে না।’ চালের দাম না কমার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে সব কিছু যদি বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়, যেমন: ডলারের দাম, উৎপাদন খরচ সবকিছু বিবেচনা করলে আমি মনে করি বৈশ্বিক এই সংকটে চালের দাম স্থিতিশীল আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর-যে হাহাকার নেই, এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।’
বাজারে নিত্যপণ্যের চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য তো ওএমএস, কাবিখা আছে, আর অসাধারণের জন্য অ্যারোমেটিক, প্যাকেট, সিলকি আছে।
আর মধ্যবিত্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওএমএসে কি শুধু সাধারণ মানুষ যায়, সেখানে অনেক মধ্যবিত্তও যাচ্ছে।’
আরিয়ানএস/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন