কানাডার ভিসা পেয়েছিলেন ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর। এর ১০দিন পর তিনি দেশ ছেড়েছিলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বাংলাদেশ ছেড়ে গিয়ে আরিয়ান টরন্টোর নর্থ ইয়র্কে বন্ধুদের সঙ্গে উঠেছিলেন। সম্প্রতি বন্ধুদের ছেড়ে নতুন জায়গায় চলে আসেন। কারণ, তিনি নতুন কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এক মাস ক্লাস করেছিলেন। এর মধ্যে ১১ ফেব্রুয়ারি ছিল আরিয়ানের জন্মদিন। বন্ধুরা নর্থ ইয়র্ক থেকে আরিয়ানের নতুন আবাসস্থল ইতোবিকোকে এসেছিল জন্মদিন পালন করতে।
জন্মদিনের দুই দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার স্বপ্ন সড়কেই শেষ হলো আরিয়ানের।
আরিয়ানসহ তাঁর তিন বন্ধু কানাডার টরন্টোয় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। আরেক বন্ধু স্থানীয় একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। স্থানীয় সময় গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় টরন্টোর হাইওয়ে ৪২৭-এর দুনদাস স্ট্রিট ওয়েস্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার প্রায় ১০ ঘণ্টা পর আরিয়ানের পরিবার খবর পায়।
রাজধানীর তেজকুনি পাড়ায় আরিয়ানদের বাসা। আজ বুধবার দুপুরে তাঁর বাসায় বাবা এ টি এম আলমগীরের সঙ্গে কথা হয়। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর চোখ লাল হয়ে আছে। আদরের ছোট ছেলেকে হারানো এই বাবা এখন কী করবেন, বুঝতে পারছেন না। আরিয়ানের মায়ের রক্তচাপ বেড়ে গেছে। বাসাভর্তি স্বজন-পরিচিতজনেরা।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন আরিয়ান আলম। পরিবার বন্ধুদের কাছে সে দীপ্ত নামেই পরিচিত। শুরুতে ব্রেইমার কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করে চলতি বছর ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে টরন্টোর হাম্বার কলেজে ভর্তি হন। তবে গত বছর দুইবার দেশে এসেছিলেন আরিয়ান।
আরিয়ানের বাবা বলেন, ‘জানুয়ারির ৯ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু হয়। ছেলেটা মাত্র এক মাস ক্লাস করতে পারলো।’
নতুন জায়গায় গিয়ে আরিয়ানের বাসা পেতে সমস্যা হয়। এক মাস তিনি এয়ারবিএনবির মাধ্যমে বাসা ভাড়া করে থাকেন। বাবা সে কথা জানিয়ে বলেন, কানাডায় বাসা ভাড়া অনেক বেশি। শিক্ষার্থীদের জন্য অগ্রিম বাসা ভাড়াও বেশি। তবুও ছেলের সমস্যা হচ্ছে জেনে ফেব্রুয়ারির শুরুতে টাকা পাঠিয়েছিলেন।
পেশায় ব্যবসায়ী এই বাবা বলেন, ‘ও বলত, বাবা দেইখো, আমি সিএ পড়ে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হব।’
কানাডার ভিসা পেয়েছিলেন ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর। এর ১০ দিন পর তিনি দেশ ছেড়েছিলেন। ছেলে বড় কিছু হতে চাইত, খুব শৌখিন ছিল বলে জানান বাবা। বলেন, ক্রিকেট, ফুটবল খেলতেও পছন্দ করত। ছোটবেলায় নিজেই ছেলেকে আবাহনী মাঠে নিয়ে যেতেন। দুই মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে আরিয়ান সবার ছোট।
১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় আরিয়ানদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লেও তাঁর পরিবার জানতে পারে বাংলাদেশ সময় ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার পর। আরিয়ানের বোন সানজিদা আলমকে তাঁর (আরিয়ান) এক বন্ধু ফোনে দুর্ঘটনার কথা জানান। এর পর থেকে পরিবার যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এ টি এম আলমগীর বলেন, দুর্ঘটনার পর সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে নেয়া হয় ওঁদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একবারই কথা হয় তাঁর। কিন্তু এরপর আর যোগাযোগ করতে পারেননি। আরিয়ানের বড় বোন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। ভাইয়ের খবর শুনে তিনি কানাডায় গেছেন।
কথার মাঝে ক্ষণে ক্ষণে কাঁদছিলেন এ টি এম আলমগীর। বারবার বলেছিলেন, ‘ছেলেটা আমার চলে গেল।’ প্রতিদিনই ছেলের সঙ্গে কথা হতো। গাড়ি বা গতির নেশা ছিল না জানিয়ে আরিয়ানের বাবা বলেন, ‘শুনেছি, ওদের গাড়ির গতি ২০০-এর ওপর ছিল। ও পেছনে বসা ছিল। ও নাকি গাড়িতেই মারা যায়।’
আরিয়ানএস/এএল
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন