ছবি: সংগৃহীত
আদালত প্রতিবেদক
নিজের থানা চকবাজার। কিন্তু এক পরিবহন ব্যবসায়ীকে তুলে এনেছেন লালবাগ থেকে। শুধু তাই নয়, থানায় আটকে রেখে ব্যবসায়ীর স্ত্রীর কাছে দাবি করেন অর্ধকোটি টাকা। পরে দফারফা হয় ১৫ লাখ টাকায়। ঘটনার এখানেই শেষ নয়; প্রতারণার মামলায় আদালতেও চালান করে দেন ওই ব্যবসায়ীকে। তবে এ সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন চকবাজার থানার ওসি আব্দুল কাইউম।
গত ২৬ জানুয়ারি গভীর রাতে লালবাগ থানা এলাকার একটি বাসায় ঢোকে চকবাজার থানা পুলিশের একটি দল। দলটি তুলে নিয়ে যায় মোক্তার নামে এক ব্যবসায়ীকে। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সময় সংবাদের কাছে ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা অভিযোগ আকারে তুলে ধরেন ভুক্তভোগী মোক্তার। এরপরের ঘটনা আরও ভয়াবহ বলে জানান তিনি। চকবাজার থানার গারদে আটকে রেখে মামলার ভয় দেখিয়ে দলের এক সদস্য দাবি করেন ৫০ লাখ টাকা।
মোক্তার জানান, ‘ওসি আব্দুল কাইউমের নেতৃত্বে পুলিশের দলটি আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ভিডিও করে। এরপর বলেছে, অস্ত্র মামলা করবে। খবর দেয়ার পর আমার স্ত্রী থানায় আসেন এবং ১৫ লাখ টাকা দেন। টাকা না দিলে আমার জীবন শেষ করে দিত।’
মোক্তারের স্ত্রী কোনো উপায় না দেখে ইকবাল নামে পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে জমি কেনার জন্য দেয়া টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা এনে ওসির হাতে দেন বলে জানান মোক্তার। মোক্তারের স্ত্রী জানান, ‘তারা (পুলিশ) আমাকে বলে, তোমরা বড় ব্যবসায়ী; সেহেতু ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। তখন আমার স্বামী ওসিকে বলেন, স্যার আমি এতো টাকা কোথা থেকে পাব। এ কথা বলার পর ১৫ লাখ টাকায় তারা রাজি হয় আমার স্বামীকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। তারপর ইকবাল ভাইয়ের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা এনে দেই।’ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘আমার কাছ থেকে জমি কেনার জন্য মোক্তার দুটো গাড়ি বিক্রি করে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছিল; পরে চকবাজার থানার ওসিকে দেবার কথা বলেই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।’
পরদিন আদালত থেকে জামিন নেন মোক্তার। সম্প্রতি ওসি আব্দুল কাইউমের বিরুদ্ধে তিনি লিখিত অভিযোগ দেন আইজিপি সেলে। মোক্তারের অভিযোগ: মুরাদ নামে এক ব্যবসায়ী তাকে ফাঁসাতে ওসির সহায়তায় এ কাজ করেছেন।
মোক্তার বলেন, ‘আমার দোষ হলো আমার গাড়ি ভাড়া নিয়ে মুরাদ নামে আরেক ব্যক্তি পলিথিন সরবরাহ করতেন সারা দেশে। মাঝে মাঝে এ কারণে পিকআপসহ পলিথিন আটক করত থানা পুলিশ। তাই মুরাদকে পরিবহনের গাড়ি ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেই। আর সেই ক্ষোভের শিকার হই আমি নিজেই।’
তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে মুরাদকে ফোন করা হলে তিনি জানান যে, তিনি এখন ঢাকার বাইরে আছেন। তবে ঘণ্টাখানেক পর ফোন করবেন বললেও পরে বার বার ফোন করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
তবে, অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন চকবাজার থানার ওসি আব্দুল কাইউম।
ওসির বক্তব্য হল, ‘যদি ১৫ লাখ টাকা নেয়া হবে, তবে মামলা কেন? তিনি আরও বলেন, টাকাও নিচ্ছেন আবার তাকে আদালতে চালানও করছেন এটা পাগলের কথা। মানুষ পাগল বলবে। যেহেতু আমার বিপরীতে কথা বলা হচ্ছে, সেহেতু আমার জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ নেই। তারা প্রমাণ দিক, আর আমি আমার পক্ষে ডিফেন্স করব।’
প্রসঙ্গত চকবাজার থানার ওসি আব্দুল কাইউম ও ইমামগঞ্জ রহমানিয়া ট্রান্সপোর্টের মালিক আমিনুল ইসলাম মুরাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদরদফতরে অভিযোগ করা হয়। সদর দফতরের আইজিপিস কমপ্লেইন সেলে অভিযোগ করেন মোক্তার হোসেন নামে এক গাড়ির মালিক।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে এ ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত হাতে নিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর সাক্ষ্যও নেয়া হয়েছে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গাড়ি ভাড়া নিয়ে সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করেন অভিযুক্ত ব্যবসায়ী মুরাদ। এটি জানতেন না বলে অভিযোগে দাবি করেন ওই গাড়ির মালিক। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে মনমালিন্য হয়। পরবর্তীতে গাড়িতে জিপিএস ট্র্যাকার রাখাকে কেন্দ্র করে গত ২৮ জানুয়ারি গাড়ির মালিক মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী মুরাদ বাদী হয়ে একটি প্রতারণা মামলা করেন।
পুলিশ সদরদফতরে করা অভিযোগে বলা হয়, এ মামলায় গাড়ির মালিক মোক্তারকে চকবাজার থানায় দুই রাত একদিন আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এছাড়া ৫০ লাখ টাকা ঘুষও দাবি করেন থানার ওসি কাইউম সরকার। নয়তো অস্ত্র-মাদক মামলা দিয়ে চালান দেয়ার হুমকি দেন। এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন ওসি। তিনি নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায় মুরাদকে সহযোগিতা করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আরিয়ানএস/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন