প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩, ০৭:৩৫ পিএম
বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ‘স্ট্রেনদেনিং উইম্যানস অ্যাবিলিটি ফর প্রোডাকটিভ নিউ অপরচুনিটিস’ প্রকল্প। চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ায় চলমান প্রকল্পটি ৬ বছরের মাথায় এসে বাদ দিচ্ছে সরকার। সূত্র জানায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ২০১৫ সালে ৬৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের মূল অগ্রগতি হয়েছে ২২ শতাংশ। বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যায়নি। তাই অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্পটির সমাপ্তি ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের আওতায় দেশের পাঁচ জেলার ১২ হাজার ৪৯২ জন নারী সহায়তা পেয়েছেন। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পটিকে রাখা হয়নি।
আরও জানা জানা যায়, মূলত চার কারণে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল সরকার। এগুলো হচ্ছে- নারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, উপকূলীয় এবং খাদ্য ঘাটতি প্রবণ চরম দারিদ্র্য অঞ্চলের দুস্থ ও অসহায় নারীদের ‘দারিদ্র্য ফাঁদ’ থেকে উত্তরণের উপায় উদ্ভাবন ও গ্রামাঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচন এবং উন্নয়ন কর্মসূচিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল সম্পর্কে অবহিত করা এবং সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে দারিদ্র্য বিমোচনে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা। মূলত, এসব কারণেই টেকসই প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল ‘স্ট্রেনদেনিং উইম্যানস অ্যাবিলিটি ফর প্রোডাকটিভ নিউ অপরচুনিটিস’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
জানা গেছে, মূল ডিপিপি অনুযায়ী, জুন ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা (২১ দশমিক ৭১ শতাংশ)। বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ২২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রকল্পটি অসমাপ্ত রেখে সমাপ্ত করার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- বৈদেশিক অনুদান সংস্থান করা সম্ভব না হওয়ায় এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, অতিদরিদ্র ও দুর্যোগপ্রবণ ২২টি জেলার ১ হাজার ৩০টি ইউনিয়নের ৬৪ হাজার ৯৮০ নারীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ৮৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প বাস্তবানের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এরপর পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে বাস্তবায়নের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছর। তৃতীয় মেয়াদে আরও ছয় মাস সময় বাড়ানো হয়। সে হিসাবে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি গ্রহণের সময় জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), সুইডেন দূতাবাস, এসডিজিএফ (স্পেন), ম্যারিকো লিমিটেড (বাংলাদেশ), বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বাংলাদেশ) ও ব্যাংক এশিয়া (বাংলাদেশ) থেকে ৬৪০ কোটি টাকা ও সরকারের অনুদান হিসেবে ২১৩ কোটি টাকা পাওয়ার কথা ছিল। তবে ইউএনডিপি থেকে ৩৫ লাখ ডলার পাওয়া গেলেও অন্য কোনো উৎস থেকে সাহায্য পাওয়া যায়নি।
তবে যে অর্থ পাওয়া গেছে, তা দিয়ে মাত্র পাঁচ জেলায় শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেছে। বাকি জেলাগুলোয় কোনো সাফল্য অর্জিত না হওয়ায় প্রকল্পটি শেষ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় মূল কার্যক্রম হিসেবে বলা হয়- এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, বিধবা/স্বামী পরিত্যক্ত/স্বামী কাজ করতে অক্ষম, এমন নারীদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রণীত স্কিমগুলো (রাস্তা-ঘাট মেরামত, বাঁধ সংস্কার, মাটি ভরাট ইত্যাদি) বাস্তবায়নে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। উপকারভোগীরা দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহের জন্য দৈনিক ১৫০ টাকা হারে মজুরির পাশাপাশি দৈনিক ৫০ টাকা হারে বাধ্যতামূলক সঞ্চয় পাবেন। তাদের জীবনমান উন্নয়নকল্পে জীবন দক্ষতাবিষয়ক ৬টি বিষয়ে (স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, নারী-পুরুষ সম্পর্ক উন্নয়ন, নারী অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ মোকাবিলা, স্বশিক্ষণ সহজ হিসাব, নেতৃত্ব উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের করণীয়) প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ৮৫৩ কোটি টাকার মধ্যে বৈদেশিক অনুদানের অংশ ছিল ৬৪০ কোটি টাকা। কিন্তু বিদেশি অনুদানের ৯৪ দশমিক ২৩ শতাংশ ‘অর্থহীন’ অবস্থায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ইএনডিপি কর্তৃক প্রতিশ্রুত অর্থ এবং জিওবি অর্থের ভিত্তিতে অনুমোদিত ২২টি জেলার মধ্যে ২টি জেলার (কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরা) ১২৪টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ৪৬৪ নারী উপকারভোগী নিয়ে প্রকল্পের প্রথম চক্রটি সম্পন্ন হয়। এরপর ১৮টি জেলার ৭৭৫টি ইউনিয়নের ২৭ হাজার ৯০০ নারী উপকারভোগীকে নিয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় চক্র আরম্ভের কথা ছিল। কিন্তু নতুন কোনো আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অর্থ না দেয়ায় ইউএনডিপি ও জিওবি’র পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকে আসা অর্থের মাধ্যমে দ্বিতীয় চক্রটি সম্পন্ন করা হয়।
পরবর্তী সময়ে ইউএনডিপি এবং সুইডেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অনুদানে আরও তিন জেলার ১১টি ইউনিয়নের তিন হাজার ৫৬৪ উপকারভোগী নিয়ে প্রকল্পের তৃতীয় চক্র বাস্তবায়ন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ঠিকমতো অর্থ সহায়তা দিতে না পারায় প্রকল্পটি বাদ দেয়ার কথা বিবেচনা করতে হচ্ছে। তবে পরবর্তীকালে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া গেলে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।’
আরিয়ানএস/এএল