প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) হতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার।
১৯৯৮ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে তার মৃত্যু হয়। প্রায় একই সময়ে সীমা চৌধুরী নামের এক তরুণী চট্টগ্রামের রাউজানে পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তিনি মারা যান। অন্যদিকে অরুণ চক্রবর্তী নামের এক যুবক রাজধানীর মালিবাগ থানায় পুলিশ হেফাজতে মারা যান। পুলিশ হেফাজতে রুবেলের মৃত্যুর পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে মানবাধিকার সংগঠন ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, অরুণ চক্রবর্তীর স্ত্রীসহ কয়েকটি সংস্থা ও কয়েকজন ব্যক্তি। পরবর্তীতে ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. হামিদুল হক ও বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৬ মাসের মধ্যে ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের জন্য ৭ দফা সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে আদালত ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায়ে বলেন, আইন সংশোধনের আগে এই ১৫ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। হাইকোর্টের রায়ে আরও বলা হয়, ডিটেনশন (আটকাদেশ) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে গ্রেফতারের ৩ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের ভেতরে কাচ দিয়ে নির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারী পরীক্ষা করাতে হবে।
পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে ২০১৬ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৪ বিচারপতির বেঞ্চ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ৫৪ ও ১৬৭ ধারার কয়েকটি বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় হাইকোর্ট কয়েক দফা সুপারিশ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন (মডিফিকেশন) থাকবে। ৫৪ ও ১৬৭ ধারা প্রয়োগের বিষয়ে একটি নীতিমালা (গাইডলাইন) করে দেয়া হবে। ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপিল বিভাগের দেয়া ৩৯৬ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এই রায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বিভাগে বিষয়টি বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য এলে আদালত ‘নট টুডে’র আদেশ দেন। এর ফলে এ বিষয়টির শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার হতে পারে বলে জানান আবেদনকারীদের পক্ষে আছেন আইনজীবীরা।
আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিভিউ আবেদনকারীদের পক্ষে আছেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল, আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
আরিয়ানএস/এএল