প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ১০:২০ পিএম
সাকার মাছ নিষিদ্ধ করে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মৃনাল কান্তি দে ১১ জানুয়ারি এই প্রজ্ঞাপন জারি করেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর সাকার মাছ নিষিদ্ধ করতে প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০–এর ১৮ নম্বর ধারা সংশোধন প্রস্তাব প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে লিখিতভাবে অনধিক দুই মাসের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মৃনাল কান্তি দেকে জানানোর জন্য বলা হয়।
মন্ত্রণালয়ের ১১ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু, উক্ত প্রাক্–প্রকাশনায় উল্লিখিত ২ (দুই) মাস সময় ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হইয়াছে এবং প্রস্তাবিত সংশোধনের উপর প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে সরকার উক্ত রুলসের অধিকতর সংশোধনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’ এরপর প্রজ্ঞাপনে আইনের ১৮ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়, সাকার মাছ কোনো ব্যক্তি আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ বা প্রদান, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রকাশ ও অধিকারী হতে পারবেন না।
যে কারণে নিষিদ্ধ সাকার
সাকার মাছের ইংরেজি নাম Suckermouth Catfish বা Common Pleco। এই মাছ দেশের জন্য ক্ষতিকর বলে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছে মৎস্য অধিদফতর। তাদের এক প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, সাকার মাছ আশির দশকে ব্রাজিল থেকে অননুমোদিতভাবে বাহারি মাছ হিসেবে প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে সাকার মাছ নদী–নালা, খাল–বিল ও চাষের পুকুরে চাষ করা মাছের সঙ্গে ব্যাপকভাবে ধরা পড়ছে। যা জীববৈচিত্র্য তথা দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ।
সাকার মাছের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে প্রচারপত্রে আরও বলা হয়েছে, যে কোনো জলজ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে এই মাছ। দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে বংশবিস্তারে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, সর্বোপরি জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে সাকার। দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছসহ জলজ পোকামাকড়, শ্যাওলা, ছোট শামুক জাতীয় প্রাণী খেয়ে সাকার মাছ পরিবেশের সহনশীল খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে। জলাশয় পাড়ের ক্ষেত্রবিশেষ পাঁচ ফুট পর্যন্ত গর্ত করে পাড়ের ক্ষতি করে এবং জলাশয়ের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা কমায়।
গত বছরের জুনে সচিবালয়ে সাকার মাছ থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় করণীয় বিষয়ে এক সভা হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। সেখানে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের পক্ষে তৎকালীন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান বলেন, সাকার মাছ শ্যাওলা, প্লাঙ্কটনজাতীয় খাবার বেশি খায় বিধায় জলাশয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য কমে যায়। জলজ জীববৈচিত্র্য ও মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ মাছটির পুষ্টিগুণ বেশি। তবে এর মাংসে ক্যাডমিয়াম নামক ধাতুর উপস্থিতি উচ্চমাত্রায় পাওয়া গেছে।
অ্যাকুরিয়ামে শোভা বর্ধনকারী মাছ হিসেবে পালন বন্ধ করতে হবে। সাকার যেন নতুন করে উন্মুক্ত বা বদ্ধ জলাশয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে।
যদিও ২০০৮ সালে পিরানহা মাছ এবং ২০১৪ সালে আফ্রিকান মাগুর নিষিদ্ধ করলেও এখনো এসব মাছ বিভিন্ন সময় বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়।
মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) শামীম আরা বেগম বলেন, প্রজ্ঞাপন হয়ে গেছে, এখন যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেভাবে করা হবে। এর আমদানি, চাষ, পরিবহন যেন না হয়, সেসবও দেখা হচ্ছে।
সাজেদ/এএল