• ঢাকা শুক্রবার
    ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

ঢাকায় এক কবর দেড় কোটি টাকা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০২৩, ০৩:৪৯ এএম

ঢাকায় এক কবর দেড় কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে কবরস্থান আছে মাত্র ৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় তিনটি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় আছে ছয়টি। এসব কবরস্থানে নতুন করে আর জায়গা বাড়ানোর সুযোগ নেই। তাই সাধারণভাবে এসব কবরস্থানে একই কবরে অনেককে কবর দেওয়া হয়। তবে বিশেষ নিয়ম মেনে বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে কবর সংরক্ষণ করা যায়। সেটি সর্বোচ্চ ২৫ বছর পর্যন্ত।

মরদেহ দাফনে জায়গার স্বল্পতার কারণে এবং কবর সংরক্ষণে নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কবর সংরক্ষণ ফি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

গত ১৮ জানুয়ারি উত্তর সিটির কবরস্থানসমূহের জন্য নতুন নীতিমালা অনুমোদন করেন ডিএনসিসির সচিব ড. মোহাম্মদ মাহে আলম। এই নীতিমালায় কবরের নতুন সংরক্ষণ ফি নির্ধারণ করা হয়।

ফি বেড়েছে ৩ গুণেরও বেশি

টাকা খরচ করেও যে কেউ ইচ্ছা করলে ঢাকায় কবর সংরক্ষণ করতে পারেন না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলে বা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কারো সুপারিশ থাকলে কেবল কবর সংরক্ষণের সুযোগ থাকে। তবে সেক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা গুনতে হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা ছয়টি কবরস্থানে অগ্রিম কবর সংরক্ষণ বন্ধ রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও স্থান প্রাপ্যতা সাপেক্ষে এসব কবরস্থানে বিভিন্ন মেয়াদে কবর সংরক্ষণের সীমিত ব্যবস্থা রয়েছে।

উত্তরা ও বনানী কবরস্থানে আগে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে ২৪ লাখ টাকা এবং ২৫ বছরের জন্য লাগত ৪৫ লাখ টাকা।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, বনানী কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণ করতে লাগবে ১ কোটি টাকা আর ২৫ বছরের জন্য গুনতে হবে দেড় কোটি টাকা।

একইভাবে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য ৭৫ লাখ টাকা আর ২৫ বছরের জন্য এক কোটি টাকা, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর করবস্থানে ১৫ বছরের জন্য ৫০ লাখ আর ২৫ বছরের জন্য ৭৫ লাখ টাকা, উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য ৩০ লাখ আর ২৫ বছর বছরের জন্য ৫০ লাখ টাকা সংরক্ষণ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী করবস্থানে ১৫ বছরের জন্য ২০ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ৩০ লাখ টাকা, রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে ১৫ বছরের জন্য ১০ লাখ এবং ২৫ বছরের জন্য ১৫ লাখ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কবর সংরক্ষণে নিরুৎসাহিত করতেই মূলত সংরক্ষণ ফি বাড়ানো হয়েছে। বিপুল সংখ্যক আবেদন আসে কবর সংরক্ষণের জন্য। এভাবে আবেদন বাড়তে থাকলে এবং কবর সংরক্ষণ করা হলে কবর দেয়ার জায়গা অনেক কমে যাবে। আশা করছি ফি বৃদ্ধির কারণে কবর সংরক্ষণের আবেদন কমবে।

কবর বিষয়ক অন্যান্য নিয়ম

নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়, এককালীন সর্বোচ্চ ২৫ বছরের জন্য কবর সংরক্ষণের অনুমতি দেওয়া যাবে। তবে আবেদনকারী মৃত ব্যক্তির পক্ষে কোনো বৈধ উত্তরসূরি, শুভাকাঙ্ক্ষী ১৫/২৫ বছরের অনুমোদিত সংরক্ষণ মেয়াদ অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবার কবর সংরক্ষণে আগ্রহী হলে ইতোপূর্বে অনুমোদিত মেয়াদের মধ্যে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। তার আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হলে (১৫/২৫ বছরের) নির্ধারিত নবায়ন ফি পরিশোধ সাপেক্ষে সংরক্ষণের মেয়াদ নবায়ন করা যাবে।

সংরক্ষিত প্রতিটি কবরের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার পরিমাণ ৮‍‍`-০" x ৪‍‍`-০" এর অতিরিক্ত হবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, কবর পাকা করার ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত জায়গার বেশি জমি ব্যবহার করা যাবে না। কবরের উচ্চতা হবে ছাদবিহীন অনধিক ৩‍‍`-০"।

এই নীতিমালার আওতায় সংরক্ষিত কবরের উপর পুনঃকবর দেওয়ার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ফিসহ বনানী কবরস্থানের জন্য ৫০ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য কবরস্থানসমূহের জন্য ৩০ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তবে সংরক্ষিত কবরের উপর দাফনকৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা, স্বামী,স্ত্রী, পিতা-মাতা, সহোদর-সহোদরা ব্যতীত অন্য কাউকে পুনঃকবর দেওয়া যাবে না। পুনঃকবরের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ফরম পূরণ পূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। যখনই পুনঃকবর দেওয়া হোক না কেন, যে সংরক্ষিত কবরের উপর পুনঃকবর দেওয়া হবে তার (সংরক্ষিত কবরের) পূর্বের মেয়াদ বহাল থাকবে। মেয়াদি কবরের উপর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বের দুই বছরের মধ্যে পুনঃকবর দেওয়া যাবে না।

কবরের জায়গার সংকটের বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, অপরিকল্পিত এই শহরে নতুন জায়গা বের করে নতুন কবরস্থান করা কঠিন কাজ। তবে সিটি করপোরেশনের নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এখনো সেভাবে স্থায়ী উন্নয়নের কাজ শুরু হয়নি। তাই সেই ওয়ার্ডগুলোতে নতুন জায়গা বের করে কবরস্থান উপযোগী জায়গাকে নির্ধারণ করা গেলে অন্তত ওইসব এলাকায় কবরস্থানের সংকট অতটা আর থাকবে না। একই সঙ্গে বেসরকারি আবাসন কোম্পানিগুলোকেও যদি তাদের প্রকল্পে কবরস্থানের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারন করতে বাধ্য করা যায় তাহলে এই সংকটের অনেকটাই সমাধান হতে পারে।

আর্কাইভ