• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

গুলশানের সেই স্পা সেন্টারে তরুণীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৩, ০২:২৮ এএম

গুলশানের সেই স্পা সেন্টারে তরুণীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হতো

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

চাকরির প্রলোভনে তরুণীদের সংগ্রহ করতেন গুলশান ২ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়িতে থাকা ‘অল দ্যা বেস্ট স্পা’ সেন্টারের মালিক। এরপর তাদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন তিনি।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে গুলশানের ওই স্পা সেন্টারটিতে অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানের সময়ে স্পা সেন্টারটি থেকে লাফিয়ে পড়ে এক তরুণীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাতেই মামলা করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রি-প্রসিকিউশন অফিসার আব্দুস সালাম।

মামলায় স্পা সেন্টারের মালিক হাসানুজ্জামান (৪২), তার স্ত্রী স্পা সেন্টারের ম্যানেজার শাহিনুর আক্তার পায়েল (৩৫) ও বাড়ির মালিক এ.টি এম মাহবুবুল আলমকে আসামি করা হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে তারা তিনজনই পলাতক।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গতকাল বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর ৩টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছিল। অভিযানে ৪৭ নম্বর সড়কে বিভিন্ন আবাসিক ভবন হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পরও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করা হয়। এর অংশ হিসেবে গুলশান ২৫ নম্বর বাড়ির ৪র্থ তলায় যাওয়ার পর ৪-ডি ফ্ল্যাট বন্ধ পাওয়া যায়। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমাদুল হাসানের নেতৃত্বে ফ্ল্যাটটিতে প্রবেশ করে উপস্থিত ব্যক্তিদের অসংলগ্ন অবস্থায় দেখতে পান।

সেখানে উপস্থিত ৯ জনকে আটক করলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, পলাতক আসামি হাসানুজ্জামান, তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তার পায়েল ও বাড়ির মালিক এ.টি এম মাহবুবুল আলম পরস্পর যোগসাজশে ‘অল দ্যা বেস্ট স্পা’ নামে এটি পরিচালনা করে আসছিলেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তরুণীদের সংগ্রহ করে এখানে এনে অবৈধ দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতেন।

ভবনটি আবাসিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করলেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহৃত হচ্ছিল। ফলে ডিএনসিসি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা পরিচালনা করায় তা আইনত অবৈধ বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে মামলার বাদী আরও বলেন, বেলা ৩টার দিকে ভবনের পার্শ্ববর্তী ফ্ল্যাটের লোকজন এসে জানায় ২ জন নারী ভবনের নিচে পড়ে আছেন। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে জানালে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে দুই নারীকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে একজন মারা যান এবং আরেকজন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, স্পা সেন্টারে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে তরুণীদের সংগ্রহ করতেন আসামিরা। এরপর তাদের পতিতাবৃত্তি ও অসামাজিক কাজে বাধ্য করা হতো।

এদিকে গতকাল ‌‘অল দ্যা বেস্ট স্পা’ সেন্টার থেকে আটক ৯ জনকে পাঁচশত টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে পাঁচ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেন ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে আজ তারা জরিমানার ৫০০ টাকা পরিশোধ করে সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্ত হন।

সিএমএম আদালতের হাজত খানার ইনচার্জ শহীদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ডিএমপি অধ্যাদেশের ৭৪ ধারায় অপরাধ করায় তাদের একই অধ্যাদেশের ১০০ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ।

গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসিব বলেন, মামলার আসামিরা এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া এই পতিতালয় চালানোর যে অভিযোগ আনা হয়েছে এতে আসামিদের সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আর্কাইভ