প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ফজর নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুরু হয়েছে মুসুল্লিদের পদচারণা। মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) রাত থেকে মুসুল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। বুধবার (১১ জানুয়ারি) এর পরিমাণ আরও বেড়েছে। আয়োজকরা বলছেন, নির্ধারিত দিনের আগেই মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব বয়ান শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বুধবার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় ইজতেমা মাঠ পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করতে সব ধরনের নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে চাই আপনারা নির্ভয়ে ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন।
এদিকে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধের পর এবারের ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে।
ইজতেমা আয়োজক মাওলানা জোবায়ের অনুসারী (আলমী শুরা) মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, ইজতেমা শুরুর আগেই এবার মুসুল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। সঙ্গে বিদেশি অতিথিরাও আসছেন। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ায় তিনি মহান রবের দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট খিত্তা পরিপূর্ণ হয়ে গেলে সন্ধ্যার পর থেকেই বয়ান শুরু হতে পারে।
এদিকে ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসুল্লিদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসুল্লিদের বিনা মূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়াও টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া, অ্যাজমা, ট্রমা, বক্ষব্যাধি, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, নাক-কান-গলা, চক্ষু ও বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম চলবে। এজন্য পর্যাপ্ত বেডও থাকবে। ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর এ হাসপাতালে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন থাকবে।
তুরাগ তীরের ইজতেমা মাঠের মুসুল্লিদের যাতায়াত সহজ করতে এবার ৫টি পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দুটি পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে কামারপাড়া-টঙ্গী সড়ক সেতুর পাশে, আর রানভোলা নৌ পুলিশ থানার পাশে একটি, আবদুল্লাহপুর বায়তুন নুর মসজিদের পাশে একটি এবং আবদুল্লাহপুর কাঁচাবাজার এলাকায় একটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহণ করেছে ফায়ার সার্ভিস। পুরো ময়দান ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারলেস ফ্রিকোয়েন্সির আওতায় আনা হয়েছে। অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ময়দানের প্রতিটি খিত্তায় ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার হুক, ফায়ার বিটারসহ দুইজন করে ফায়ার ফাইটার দায়িত্ব পালন করবেন। তুরাগ নদীসহ ময়দানের চারপাশে ১৪টি পোর্টেবল পাম্প প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ময়দানের বিভিন্ন স্থানে ৪টি পানিবাহী গাড়ি, রোগী পরিবহনে ৫টি অ্যাম্বুলেন্স, সহজে বহনযোগ্য স্পিডবোট, পিকআপে ডুবুরিদল, ১৩টি জেনারেটর এবং লাইটিং ইউনিট মোতায়েন থাকবে। মাঠের বিভিন্ন স্থানে ফায়ার সার্ভিসের ৩৬১ জন কর্মকর্তা ও ফায়ার ফাইটার মোতায়েন থাকবে। ময়দানে ফায়ার কন্ট্রোলরুমও স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া আশপাশের ফায়ার স্টেশনগুলোও ইজতেমার শেষ দিন পর্যন্ত সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।
উল্লেখ্য, ১৩ জানুয়ারি (শুক্রবার) শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি (রোববার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের (জুবায়েরপন্থী) বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সাদপন্থী) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।
এনএমএম/