তরিকুল ইসলাম সুমন
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা এবং পশু বিক্রি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অনিশ্চয়তা দূর করতে পশু বেচাকেনায় অনলাইন প্লাটফর্মে জোর দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে খামারিদের গত বছরের কিছুটা অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় সরকার।
মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদে গরুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটিং ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নাই। এই প্লাটফর্মকে কাজে লাগাতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সরকারিভাবে খামারি, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের একই প্লাটফর্মে আনার জন্য কাজ চলছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোসাদ্দেক হোসেন সিটি নিউজকে জানান, করোনা মহামারির এ সময়ে কোরবানির পশু বিক্রির বিষয়টি অনলাইন প্লাটফর্মে আনা প্রয়োজন। আগের বছর সরকার সারা দেশে এটি পরিচালিত করেছে। এবার এটি কাজে লাগানোর সময়।
তিনি আরও বলেন, অনলাইনে পশু বিক্রি নতুন বিষয় নয়, বড় বড় অনেক খামারিরা তাদের খামারের ওয়েবসাইট করে অনেক আগে থেকেই পশু বিক্রি করে আসছেন। এবার করোনার কারণে গুরুত্ব বেড়ে গেছে। এ বিষয়ে খামারিদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিদের আগ্রহী করে তুলতে হবে অনলাইন হাটে গবাদিপশু বিক্রির জন্য।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা সিটি নিউজকে বলেন, করোনার কারণে সবাই সমস্যার মধ্যে রয়েছি। গত বছর থেকে আমরা অমাদের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সকল খামারিদের ডাটাবেজ তৈরি করে অনলাইন প্লাটফর্ম করেছি। এবারও স্বাস্থ্যবিধির কারণেই হয়তো অনেক খামারি হাটে তাদের পশু আনতে পারবেন না। তবে আমরা তাদের পশু বিক্রির জন্য অনলাইন মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যেই দেশের সকল বিভাগীয় প্রণিসম্পদ অফিস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। তাদের পশুর ছবি, ওজন, দাম অনলাইনে আপলোডের ব্যবস্থা করেছি। যারা কিছুই বোঝেন না তাদের আমাদের কর্মকর্তারা সহায়তা দিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, ঢাকাসহ দেশের প্রায় এক হাজার অস্থায়ী হাটে পশু বিক্রির জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা না চাইলেও অনেকে হাটে নিয়ে সরাসরি পশু বিক্রি করবে। আমরা তাদেরও প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করব। প্রতিটি হাটেই আমরা পশুচিকিৎসকদের টিম রাখব। যাতে করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। ক্রেতারাও যাতে সুস্থ গবাদিপশু কিনতে পারেন।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপপরিচালক (খামার) জিনাত সুলতানা সিটি নিউজকে জানান, আমরা সারা দেশে খামারিদের সচেতন করার জন্য কাজ করছি। যারা অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত হতে পরবেন না। তারাও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের গবাদি পশু হাটে তোলেন। যারা হাটে তাদের পশু তুলতে পারবেন না, বা কারও কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনার এ সময়ে খামারি ও ক্ষুদ্র চাষিদের গবাদিপশু বিক্রির জন্য আমরা তাদের মোবাইল ও অনলাইন প্লাটফর্মে আনার জন্য কাজ করছি। দেশের ৪ লাখ ২০ হাজার খামারি ও ক্ষুদ্র চাষিদের এর আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য আমাদের রিজিওনাল, মেট্রোপলিটন ও থানা অফিস ও অফিসের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। দিচ্ছেন চাষিদের নানা তথ্য-উপাত্ত। এ ছাড়াও আমাদের কাছে কেউ আসলে আমরা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে সমন্বয় করে দেব।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মোবাইল এবং অনলাইন দুটি সেবাই চালু রাখা হবে। কেউ পশু কিনতে চাইলেও সাহায়তা দেয়া হবে, আবার বিক্রি করতেও সহায়তা করা হবে। যা কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হবে।
তিনি জানান, এ বছর ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার বেশি। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার, ছাগল-ভেড়া ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার, উট-দুম্বা রয়েছে ৪ হাজার ৭৬৫টি।
ঢাকা বিভাগে ৯২ হাজার ৮২১ জন খামারির ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৬৪টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ হাজার ৯৬৩ জন খামারির ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৪৩টি, খুলনা বিভাগে ১ লাখ ৭ হাজার ২২৭ জন খামারির ৮ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২টি, রাজশাহী বিভাগে ১ লাখ ২৭ হাজার ২৬১ জন খামারির ১৪ লাখ ১০ হাজার ৮০৯টি, রংপুর বিভাগে ২ লাখ ২২ হাজার ৪১৮ জন খামারির ১৩ লাখ ৩ হাজার ২৪১টি, সিলেট বিভাগে ১২ হাজার ৯৭২ জন খামারির ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭২৫টি, বরিশাল বিভাগে ২০ হাজার ৩৮৭ জন খামারির ১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৪ হাজার ৬৬ জন খামারির ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫টি হৃষ্টপুষ্ট গবাদি পশু রয়েছে।
তরিকুল/সবুজ/এএমকে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন