আরিফ আজম, ফেনী প্রতিনিধি
আল-আমিন। বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার বাসিন্দা হলেও গত ১৭ বছর ধরে বসবাস করছেন ফেনী শহরে। বাস চালক হিসেবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ‘কঠোর বিধিনিষেধে’ গাড়ির চাকা না ঘোরায় স্বজনদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এক পর্যায়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে পেশাও পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। গত ১০-১২ দিন ধরে তাকে শহরের মহিপালে ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এ চিত্র শুধু আল-আমিনের নয়, ফেনীর প্রায় ১০ হাজার বাস শ্রমিকের পরিবারের জীবিকা নিয়ে রয়েছে এমন অনিশ্চয়তা।
একাধিক মালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী-ঢাকা, ফেনী-চট্টগ্রাম, ফেনী-সোনাপুর, ফেনী-বসুরহাট, ফেনী-লক্ষ্মীপুর, ফেনী-কুমিল্লা, ফেনী-পরশুরাম, ফেনী-সোনাগাজী, ফেনী-বারইয়ারহাট রুটে বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এসব পরিবহনে প্রায় ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’র কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেক চালক-হেলপার জীবিকার তাগিদে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন।
ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া এলাকার ফরহাদ নামে একজন গত কিছুদিন ধরে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের শ্বশুরের গ্রামে বসবাস করছেন। সেখানে দিনমজুর হিসেবে রোজগার করে চালাচ্ছেন সংসার। রাজাপুর এলাকার আবুল কালাম নামে একজন মহিপালে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে সবজি বিক্রি করছেন। পরিবহন বন্ধ হওয়ার পর থেকে সেনবাগের বাসিন্দা ইলিয়াছ এলাকায় দিনমজুরি করছেন।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, জেলায় ফেনী জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপ, আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ফেনী জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ফেনী জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নসহ একাধিক সংগঠন থাকলেও গত একমাস ধরে চলা ‘কঠোর বিধিনিষেধে’ কোনো শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ-ই। ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
বাস চালক আল-আমিন সিটি নিউজকে জানান, বেশ কয়েকবছর ধরে হেলপার হিসেবে চাকরির পর গত চার বছর ধরে তিনি সুগন্ধা পরিবহনের চালক ছিলেন। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বেতন পেলেও এখন সবজি বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে ইনকাম হচ্ছে তার।
ফেনী-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী চারটি সুগন্ধা পরিবহনের মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ ঘোষণার পর থেকে গাড়ির মালিকরা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ সব গাড়ি দেখভাল করার জন্য প্রতিদিন ৫০০ টাকা বেতনে একজন কর্মচারী রাখা হয়েছে।
আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজম চৌধুরী বলেন, ‘সরকারিভাবে কোনো অনুদান না পাওয়ায় শ্রমিকদের কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা যায়নি।’
স্টার লাইন পরিবহনের পরিচালক মাঈন উদ্দিন সিটি নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন রুটে দুইশরও বেশি নিজস্ব পরিবহন চলাচল করে। এসব পরিবহনের কাউন্টার, চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারসহ প্রায় ১২০০ শ্রমিক নিযুক্ত রয়েছেন। বেতন বন্ধ না থাকলেও গাড়ি বন্ধ থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’
ফেনী জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম নবী বলেন, ‘সরকার যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে মার্কেট, বাজার খুলে দিয়েছে সেখানে যথাযথভাবে তা মানা হচ্ছে না। অথচ বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব। তাই অবিলম্বে পরিবহন খুলে দেয়ার দাবি জানাই।’
ডব্লিউএস/এএমকে/
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন