• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন ৩ ঘণ্টায় শনাক্ত হবে কালাজ্বর

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩, ২০২৩, ০৩:৩৪ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন ৩ ঘণ্টায় শনাক্ত হবে কালাজ্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

 মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে ৩ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণঘাতি রোগ কালাজ্বর নির্ভুলভাবে শনাক্ত করার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিমের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

সোমবার (২ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কালাজ্বর নির্ণয়ের নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন গবেষকরা।

কালাজ্বর শনাক্তকরণে নতুন এ পদ্ধতি দ্রুত ও কার্যকরী একটি নতুন মলিকিউলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি হবে বলে জানান তারা। এ পদ্ধতির ফলে সময় বাঁচানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমাবে বলে জানিয়েছেন গবেষক ড. মুহাম্মদ মনজুরুল করিম।

কালাজ্বর বা ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস একটি রোগ যা লিশম্যানিয়াসিস রোগের কয়েকটি প্রকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর। লিশম্যানিয়া গণভুক্ত এক প্রকার প্রোটোজোয়া পরজীবী রোগটি ঘটায় এবং বেলেমাছির কামড়ের মাধ্যমে এর বিস্তার হয়। পরজীবী-ঘটিত রোগগুলোর মধ্যে এটি দ্বিতীয় প্রাণঘাতী রোগ; ম্যালেরিয়ার পরেই এর স্থান। ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিসে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ মনজুরুল করিম জানান, রিয়েল টাইম পিসিআরভিত্তিক এ মলিকুলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতি সম্পূর্ণ নির্ভুল ও নিখুঁতভাবে কালাজ্বর শনাক্তকরণের একটি রোগীবান্ধব পদ্ধতি। মূত্রের নমুনা ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে ৩ ঘণ্টার মধ্যে কালাজ্বর শনাক্ত করা সম্ভব। আগে কালাজ্বর নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থি-মজ্জা, যকৃত, প্লিহা, লিম্ফ নোডের টিস্যু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হতো। এতে রোগ শনাক্তের জন্য ৭ দিন সময় লাগত।

নতুন এই পদ্ধতিতে কালাজ্বর নির্ণয় ও নির্মূলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে গেল বলে দাবি করেন এই গবেষক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষকদের এ গবেষণা ফলাফল ইতোমধ্যেই বিশ্বখ্যাত জার্নাল পিএলওএস গ্লোবাল পাবলিক হেলথ এ প্রকাশ হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অসাধারণ উদ্ভাবনের জন্য গবেষক দলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের অনেক গবেষক ও বিজ্ঞানী রয়েছেন। নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আধুনিক ও সমৃদ্ধ ল্যাব স্থাপন করা গেলে শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ টিকাসহ বিভিন্ন ধরনের টিকা উদ্ভাবন ও উৎপাদন করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান, চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগমসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আর্কাইভ