• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২১, ০৬:৪২ পিএম

বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা

তরিকুল ইসলাম সুমন

দেশে ক্রমাগত বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ৪৬ দিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৮৫ জন। প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বজ্রপাতকে আশঙ্কাজনক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করছে সরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন দুর্যোগ পরিস্থিতি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, মে মাসে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৬৯ জন। এবং জুন মাসের ১৯ দিনে মারা গেছেন ২৬ জন। সময়ে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। সরকারের পক্ষ থেকে বজ্রপাতে মারা যাওয়াদের ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে দুই হাজার ২০৫ জন, যা গড়ে দাঁড়ায় প্রতি বছর ২২০ জন। ২০২০ সালে বজ্রপাতে মারা গেছেন ২৪৭ জন। তবে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ২০১৮ সালে, ৩৫৯ জন। ২০১৭ সালে ৩০১ জন, ২০১৬ সালে ২০৫, ২০১৫ সালে ১৬০ ২০১৪ সালে ১৭০ জন মারা গেছেন। ছাড়া ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১২ সালে ২০১ ২০১১ সালে ১৭৯ জন মারা গেছেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ্ মোহাম্মদ নাছিম সিটি নিউজকে বলেন, ‘বজ্রপাতকে আশঙ্কাজনক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণেই জাপানের জাইকার সহায়তায় বেশ কিছু প্রকল্প নেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ৮টি অঞ্চলে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র (ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা, পটুয়াখালী চট্টগ্রামে লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর) রয়েছে। যেসব জায়গায় বেশি বজ্রপাত হচ্ছে সেসব এলাকায় বজ্রপাত নিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য জোর দেয়া হবে। আগাম বার্তা দেয়ার বিষয়টি আমাদের প্রজেক্টেও যুক্ত রাখা হবে। হাওর রিস্ক ম্যানেজমেন্টের বিষয়েও নজর দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভাব্য প্রকল্পগুলো হলো বজ্রপাত নিরোধক লাইটনিং অ্যারেস্টার স্থাপন করার পাশাপাশি আর্লি ওয়ার্নিংয়ের সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত হচ্ছে।

মোহাম্মদ নাছিম বলেন, ‘ ছাড়াও হাওর বরেন্দ্র এলাকায় বজ্রপাত রোধে বা সময়ে আশ্রয় নেয়ার জন্য শেল্টার করা হবে। যাতে করে সময়ে বা দুর্যোগকালে আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। প্রতি বছরের মতো বছরও ১০০ উপজেলায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বৃক্ষরোপণের সময়েও একটি করে তালগাছ লাগানোর জন্যও প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

সারা দেশে তালগাছ রোপণ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক সিটি নিউজকে বলেন, ‘তালগাছ রোপণ এটি একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। একটি তালগাছ বড় হতে ২০-২৫ বছর লেগে যায়। দেশে সরকারিভাবে তাল গাছ লাগানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে ২০১৮ সালেই ৩১ লাখ তালের আঁটি লাগানো হয়েছে দেশের ৬১ জেলায়। তবে বজ্রপাতের ঝুঁকি হ্রাসের উপযোগী হতে এই গাছের কমপক্ষে ১৪-১৬ বছর বা তারও বেশি সময় প্রয়োজন।

দিকে তালগাছ লাগিয়ে সেটি বড় করে তোলা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হওয়ায় একে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য সুপারি গাছ লাগানোয় জোর দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক গবেষণা মতে, বাংলাদেশের প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয়। বাংলাদেশ পৃথিবীর বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।

বিভিন্ন হিসাবে দেখা গেছে, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে হাওরের তিন জেলা কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আর এসব ঘটনা বেশি ঘটে এপ্রিল মে মাসে। সময় কৃষকেরা ফসল তোলার কাজে মাঠে থাকেন। সময়টা কালবৈশাখীর।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে এবং হাওর এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয়। বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭০ শতাংশ ঘটনা ঘটে কৃষিকাজ করার সময়। ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে সাড়ে ১৪ শতাংশ এবং গোসল করা মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

তরিকুল/ডব্লিউএস

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ