প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২২, ০৬:৫৬ পিএম
সৌদি আরবে হাজেরা খাতুন নামে বাংলাদেশি নারী শ্রমিককে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। মৃত্যুর ৬ মাস পর হতভাগ্য হাজেরার মরদেহ তার পরিবার ফেরত পেলেও আশ্রয়হীন তার ৩ শিশু।
এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার-পরিজন। জনশক্তি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, গত ৫ বছরে মধ্যপ্রাচ্যে নির্যাতনের শিকার প্রায় ৫০০ নারী শ্রমিকের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে।
ব্র্যাকের চাইন্ড কেয়ার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, হাজেরা খাতুনের আড়াই বছরের শিশুসন্তান বাইতুল্লাহ ও তার বড় ভাই রিফাত (৭ বছর) ও সিফাতের (৬ বছর) সঙ্গে খেলা শেষ হতেই মাকে কাছে পেতে চায়। সেইসঙ্গে আবদার করে মাকে এনে দেয়ার জন্য। অবুঝ শিশুটি জানে না যে, তার মা নেই। না ফেরার দেশে চলে গেছে তার মা।
স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর ২৯ বছর বয়সী হাজেরা খাতুন চলতি বছরের জুনে রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স জাবির ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে যান। মাত্র ১১ দিনের মাথায় পরিবারকে জানানো হয় আত্মহত্যা করেছেন হাজেরা। পরিবার মরদেহ ফেরত চাইলেও রিক্রুটিং এজেন্সি মরদেহ দেশে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করে। সবশেষ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের হস্তক্ষেপে ১১ নভেম্বর হাজেরার মরদেহ দেশে ফেরত আনা হয়।
হাজেরা খাতুনের বোন বলেন, সৌদি আরবে নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে হাজেরার। আমার বোন হত্যার বিচার চাই।
আরও পড়ুন: আঙুল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু, গোসলের সময় দেখা গেল তলপেটে সেলাই
ব্র্যাকের হেড অব মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে ২০২০ সালের প্রথম ১০ মাসে সৌদি থেকে ২২ নারী এবং ২০১৯ সালে ৪৮ জনের মৃত্যুদেহ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ২০১৮ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে দেশে ফেরত আসেন ৬৫ জন। একই সময় দেশটিতে কারাভোগ করেন ৫ হাজার নারী শ্রমিক।
ব্র্যাকের হেড অব মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম মো. শরিফুল হাসান গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নারী শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে। কী করে মারা যাচ্ছে নারী শ্রমিকরা, সেসব রিক্রুটিং এজেন্সিকে শাস্তি আওতায় আনতে হবে এবং তাদের কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। এমন একটা কর্মকৌশল বের করতে হবে, যারা আমাদের শ্রমিক পাঠানোর কাজে জড়িত এবং দূতাবাস একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তারা যেন সৌদি অন্যায় করলে তাদের বিচার করা যায় এমন সব ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মায়ের মৃত্যুতে ৩ শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সাময়িকভাবে তাদের রাজধানীর এয়ারপোর্টে ব্র্যাকের চাইন্ড কেয়ার সেন্টারে রাখা হয়েছে।
কিউ/এএল