প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২২, ০৬:০৬ এএম
শুরু হলো গৌরবের মাস। শুরু হলো মহান বিজয়ের মাস। ৩০ লাখ শহীদকে স্মরণ করার এবং লাখো শহীদের আত্মত্যাগের মাস। অগণিত মানুষের রক্তে ভেজা এই মাস আমাদের অংকারের। এই মাস পেতে বাঙালি জাতিকে সহ্য করতে হয়েছে নির্যাতন। পিতা-মাতাকে ছেড়ে ঘর ছাড়তে হয়েছিল সন্তানদের। ৯ মাস লড়াই করে মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। অত্যাচার, নির্যাতন আর শোষণের যবণিকা ঘটে। একই সঙ্গে শেষ হয় কালো রাতের গল্প। নতুন সূর্যোদয়। নতুন আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে নতুন দেশ-বাংলাদেশ। ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস অহঙ্করেরে মাস। বাঙালি জাতির মুক্তির মাস।প্রেরণা এবং স্বপ্নের মাস। দীর্ঘ ৯টি মাস লড়াই করে পেয়েছি বাঙালির অধিকার। এর জন্য লাখো মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বহু মা হারিয়েছেন তার লজ্জা। কেঁদেছেন মানুষ, বিরাণভূমি ছিল গোটা দেশ। এত নির্যাতন সয়ে পেয়েছি আমরা কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ। বিজয়ের মাসে এলে সেদিনের সেই যন্ত্রণাগুলো কাঁদায়। আজ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ একটি মাস।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালিরা ফিরে পেয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তবে, বিজয়ের মাস এলে অশ্রুসিক্ত নয়নে শহীদ সন্তানদের খুঁজেন তাদের স্বজনরা। প্রিয়জন হারানো শোকের মাস এটি, একই সঙ্গে-উল্লাসের।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ডাক দিয়েছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই ভাষণে উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতি লড়াই করে মুক্ত করে এই দেশ।
২৫ মার্চের নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন এ দেশের কোটি জনতা। হাতে তুলে নেয় রাইফেল। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আর যুদ্ধে হারাতে হয় ৩০ লাখ বাঙ্গালী। দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয়া হয়। যার যবণীকা শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর। এই দিন বাংলাদেশের আকাশে উত্তোলিত হয় লাল সবুজের পতাকা। বাঙালির হৃদয়ে গ্রথিত হয় সোনাঝরা গৌরবের দিন।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমাদের পরম বন্ধু ছিল ভারত এবং সে দেশের সাধারণ মানুষ। সঙ্গে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। তাদের প্রেরণা, সহযোগিতা এবং সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়ক। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই একের পর এক পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। মুক্তি যোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী জল, স্থল ও আকাশপথে সাঁড়াশি অভিযানের মুখে একের পর এক এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় প্রধান শহরগুলো।
উল্লেখ, ১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভেতরে গেরিলা আক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে সেনাবাহিনী আরও ভয়াবহভাবে নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পারে জিঞ্জিরায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয় ৮৭ জনকে। বাঙালির জন্মভূমি শত্রুমুক্ত করার লড়াইকে আড়ালে রাখতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে বেতারে ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। কিন্তু সেদিন তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালিকে বিজয় অর্জন থেকে পিছিয়ে দিতে পারেনি। মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে তারা মরণপণ লড়াই চালিয়ে যায়।
প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বীর বাঙালির কাছে আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকে। বাংলাদেশ দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে সেই রেসকোর্স ময়দানেই পাকিস্তানি বাহিনী নতি স্বীকারে বাধ্য হয়।
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আসে বিজয়। এবারের বিজয়ের মাস নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালিত হবে। মাসব্যাপী থাকবে নানা কর্মসূচি ।
দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। পাল্টিয়ে গেছে দেশের রূপ লাবন্য। শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে নতুন বিশ্বে। বিশ্বের সব খানে এখন বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিচিতি পেয়েছে। ডিসেম্বর মাস আমাদের অংকারের। আমাদের সাহসের এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। লাখো শহীদের রক্তস্নাত এই দেশ বাঙালির অহংকার।
‘‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’’- এখানে আছে মানিক-মুক্তা, স্বপ্নের ডালিভরা। এখানে আছে সুয়োরাণীর গল্পগাঁথা।
সাজেদ/