• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলমকে

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২২, ০১:১৪ এএম

জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলমকে

সিআইডির পক্ষে বলা হয়েছে, প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হাজার হাজার গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা আলেশা মার্ট প্রধানকে কয়েকদিনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তাকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে গ্রাহক হয়রানি, প্রতারণা, মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত তথ্য জানার চেষ্টা করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিটি নিউজ ঢাকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, সিআইডির অনুসন্ধানের প্রথম কর্মকর্তা পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলীকে সরিয়ে দেয়ার পর নতুন তদন্ত কর্মকর্তা এরই মধ্যে অনেক কিছু গুছিয়ে ফেলেছেন। আগের তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আলেশা মার্ট প্রধান মঞ্জুর আলম শিকদারের এক ধরণের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। গ্রাহকদের পক্ষ থেকেও এই কর্মকর্তার ব্যাপারে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিআইডির ঊর্ধ্বতন মহল তার বিষয়ে অবগত আছে বলেও একজন কর্মকর্তা সিটি নিউজ ঢাকাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রাহকদের অভিযোগ, আলেশা মার্ট প্রধানকে আগে আইনের আওতায় না আনার পেছনের কারণ হচ্ছে- তার সঙ্গে প্রভাবশালী মহলের সখ্যতা আছে। এই সখ্যতার কারণে গ্রাহকরা অনেকটা অসহায় বোধ করছেন। তারা বলছেন, কঠোর আন্দোলন করে হলেও তাদের বিনিয়োগ ঘরে তুলবেন।

এদিকে আলেশা মার্ট প্রধানকে যে কোনো সময় আটক করা হতে পারে বলে  উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা এ ধরনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, তাকে গ্রেফতার বা আটকের বিষয়টি তাদের আগে থেকেই মাথায় আছে। এটা এখন সময়সাপেক্ষ। তাকে নজরদারি করা হচ্ছে। এ জন্য গোয়েন্দা টিম সক্রিয় আছে। অসংখ্য গ্রাহকের বিনিয়োগকে হাতিয়ে নিয়ে আলেশা মার্ট প্রধান যে প্রতারণা করেছেন আপাত দৃষ্টিতে তিনি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও তাকে আইনের আওতায় আনার বিষয়টি এখন অনেকটাই প্রক্রিয়াধীন। 

সিআইডির পক্ষে বলা হয়েছে, প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাকে নজরদারি করে গোয়েন্দা সংস্থার এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, মঞ্জুর আলম শিকদারের বিরুদ্ধে শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। অন্য ই-কমার্সের ক্ষেত্রে যেভাবে তড়িৎ গতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিয়েছে- আলেশা মার্টের ক্ষেত্রে খানিকটা বিলম্ব হলেও তার রক্ষা মিলবে না। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মঞ্জুর আলম শিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অর্থ পাচার সংক্রান্ত স্পর্শকাতর তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। এই মুহূর্তে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি তার স্ত্রী আলেশা মার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিয়া চৌধুরীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করলে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহকরা কখন কি করছেন, তাদের পরিকল্পনা কী, সবকিছু জানার চেষ্টা করা হয় আলেশা মার্টের পক্ষে। 

এ জন্য গ্রাহকদের ভেতরে কথিত গ্রাহক সাজিয়ে কাউকে কাউকে পেইড এজেন্ট হিসাবে রাখা হয়েছে। অত্যন্ত ধুরন্দর মঞ্জুর আলম শিকদারের পক্ষেই এই কৌশল নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি আলেশা মার্টের প্রতারিত গ্রাহকরা ৫ দফা দাবি তুলে মঞ্জুর আলমকে গ্রেফতারের দাবি জানান। পাশাপাশি তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে গ্রাহকদের বিনিয়োগ ফেরত দেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করান। 

প্রশ্ন হচ্ছে, আলেশা মার্ট প্রধান কী এমন সম্পদ প্রকাশ্যে রেখেছেন যা বাজেয়াপ্ত করলে গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ ফেরত দেয়া সম্ভব? কেউ কেউ বলছেন, আগেই সম্পদ পাচার করেছেন বা অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন মঞ্জুর আলম শিকদার। 
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনে স্পষ্ট তথ্য রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আলেশা মার্ট ব্যাংক হিসাব থেকে ১ হাজার ৯শ ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে। ব্যাংকে তাদের টাকার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১ কোটি ২৮ লাখ। কিন্তু সব টাকা আগেভাগে সরিয়ে নিয়েছে মঞ্জুর আলম শিকদার।

সম্প্রতি অনুসন্ধানের প্রথম তদন্ত কর্মকর্তাকে সরানোর পর এখন তদন্তে গতি এসেছে। নতুন কর্মকর্তার হাতে উল্লেখযোগ্য তথ্য এসেছে বলেও জানা গেছে।

সিআইডির ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান কয়েকদিন আগে সিটি নিউজ ঢাকাকে জানিয়েছেন, অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা আলেশা মার্ট প্রধানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার খুব কাছাকাছি চলে গেছেন। কয়েকদিন পরেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন প্রতারিত গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ১৮ মাস চলে গেলেও পণ্য ও টাকা কোনোটাই ফেরত পাচ্ছেন না। তাই ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম শিকদার, পরিচালক সাদিয়া চৌধুরী ও জান্নাতুল নাহারকে গ্রেপ্তার ও প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে পাওনা টাকা পরিশোধের দাবি জানান।

ফজলুল কাদের জসি নামে এক গ্রাহক বলেন, ইভ্যালির ক্ষেত্রে দেখেছি, কত দ্রুত চেয়ারম্যান ও এমডিকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ই-অরেঞ্জ, ধামাকা এবং কিউকমের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। কিন্তু শতাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও  আলেশা মার্ট প্রধানকে কেনো আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না- তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

তার আশঙ্কা এখানে কোনো গোপন লেনদেনের ব্যাপার আছে। না হলে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা এই বিষয়টা নিয়ে এতো উদাসীন কেনো? তিনি বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি এখানে কোনো গোপন লেনদেনের ব্যাপার আছে।

ছগীর হোসেন নামে অন্য এক গ্রাহক বলেন, ‘আমরা আলেশা মার্টের গ্রাহকরা কষ্টার্জিত পাওনা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমাদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাশ ভারী হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজন ও পাওনাদারদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করারও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

চলতি বছরের মে মাসে আলেশা মার্ট চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর সম্পদের হিসাব তলব করে চিঠি দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার কথা উল্লেখ করে এই তদন্ত সংস্থাটি।

 

সাজেদ/

আর্কাইভ