• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গোয়েন্দা জালে পলাতক জঙ্গিরা, যে কোন সময় গ্রেফতার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২২, ১২:১৫ এএম

গোয়েন্দা জালে পলাতক জঙ্গিরা, যে কোন সময় গ্রেফতার

ইমরান আলী, ঢাকা

রাজধানী ঢাকার আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ধরতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, কাউন্টার টেরোরিজম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব, পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি, সিআইডি ও এন্টিটেরোরিজম রাজধানীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সূত্র বলছে, গ্রেফতারের খুব কাছাকাছি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোন সময় তারা গোয়েন্দাজালে ধরা পড়বে। পাশাপাশি ফেলে মোটরসাইকেলের মালিকও চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সাথে দ্বায়িত্বে অবহেলার দায়ে পাঁচ পুলিশকে বরখাস্তও করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম এবং লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবসহ তাদের ছিনিয়ে যারা সহযোগীতা করেছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আর এ অভিযানে পুলিশের সবকটি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করছে। রাজধানী ও এর আশপাশে চলছে এ অভিযান।

কর্মকর্তাদের একটি সূত্র বলছে, পালিয়ে জঙ্গিরা খুব বেশি দূর যেতে পারেনি। সারাদেশে রেডঅ্যালার্ট ও তল্লাশির কারণে তারা বেশিদূর যেতে পারেনি বলেই আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। তারা আমাদের নজরদারীর মধ্যেই রয়েছে। যে কোন সময় তারা জালে ধরা পড়ে যাবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, যারা পালিয়েছেন এবং যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তারা সবাই নজরদারিতে রয়েছেন। যে কোনো সময় তাদের গ্রেপ্তারে আমরা সক্ষম হবো। তারা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে পুলিশ প্রধান সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন।

সম্ভ্যাব্য সকল স্থানেই অভিযান হচ্ছে।

মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিটিটিসি অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা আশা করছি, তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। কীভাবে জঙ্গিরা পালিয়ে গেল, কারা কীভাবে নিয়ে গেল, এগুলো দেখছি। তাদের প্রত্যেক গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

র‌্যাবের মুখপাত্র মঈন বলেন, ‘রোববার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুইজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ জঙ্গি পালিয়ে গেছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব আদালত প্রাঙ্গণ, অন্যান্য জায়গা, সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।

‘পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একইভাবে পালিয়ে যাওয়া দুজন জঙ্গির পূর্ববর্তী অপরাধের ধরন, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন সময় চলাচলসহ সবকিছু র‍্যাব পর্যালোচনা করছে।’

তিনি বলেন, ‘পলাতক জঙ্গিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাবের সকল ইউনিট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছে।’

এদিকে ছিনিয়ে নিতে দুটি মোটরসাইকেলে এসেছিল সহযোগীরা। তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলেই চলে যায় জঙ্গিরা। বর্তমানে সেই মোটরসাইকেলটি কোতোয়ালী থানায় রয়েছে।

বিআরটিএ সূত্রে জানায়, ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০ নম্বরের ওই মোটরসাইকেলটি ১৬০ সিসির হোন্ডা ব্র্যান্ডের হরনেট মডেলের। মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন হাসান আল মামুন নামে এক যুবকের নামে। তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা।

বিআরটিএ সূত্র আরও জানায়, মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি। গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর C39EA000**** এবং চেসিস নম্বর PS0KC3990KH****। রেজিস্ট্রেশন আইডি 62-3844591। এটির প্রথম মালিক তিনি।

সোমবার সকাল পর্যন্ত মোটরসাইকেলের মালিক হাসান আল মামুনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও জঙ্গিদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা, কেন তার মোটরসাইকেলকেই ছিনতাই অপারেশনের জন্য বেছে নেওয়া হলো, এসব বিষয়েও তথ্য নেই কারও কাছে।

পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলটি মালিক সরাসরি সরবরাহ করেছেন কি না, নাকি চুরি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোটরসাইকেল চুরি হলে তো দলিল থাকার কথা। সার্বিক বিষয়গুলো তদন্ত করছে।

অন্যদিকে আদালতে আসামিদের আনা নেয়ার ব্যাপারে দ্বায়িত্বে অবহেলার জন্য ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সিএসএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনর্চাজ পুলিশের এসআই নাহিদুর রহমান ভুইয়া, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনেস্টেবল শরিফ হাসান ও আব্দুস সাত্তার।

ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গত,  রোববার দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে জেএমবির দুই সদস্যকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। মোটরসাইকেলে করে এসে আসামিদের ছিনিয়ে নেয়া হয়। দুই আসামি হলেন মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেল।

পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার পরপরই চেকপোষ্ট গুলোতে তল্লাশির নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরো রাজধানী জুড়ে রেড অ্যালার্টও জারি করা হয়।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে পরিদর্শনও করেন। মূলত এরপরপরই পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনায় একাধিক ইউনিট গ্রেপ্তারে মাঠে নেমে পড়ে। ডিএমপির গোয়েন্দা ইউনিট, সিটিটিসির পাশাপাশি র‌্যাব ও এটিইউ এর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করছে।

আভিযানিক একটি সূত্র জানায়, আদালত পাড়ার আশপাশেই একাধিক ইউনিট কাজ করছে। ঢাকা থেকে বের হওয়ার সবগুলো পথেই পোশাক ও সাদা পোশাকে রয়েছে একাধিক ইউনিটের সদস্যরা।

আইএ/

 

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ