প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২২, ১০:৫৫ পিএম
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে ত্রিমুখী পরিবহন ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে সিলেট। শুক্রবার সকাল থেকে তিন জেলায় শুরু হওয়া দুদিনের ধর্মঘটে অচলাবস্থা বিরাজ করছে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে। এ ছাড়া পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতি সিলেটে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা ধর্মঘটের ডাক দিলেও শুক্রবার থেকেই অচল হয়ে যায় পুরো বিভাগ। ত্রিমুখী ধর্মঘটের এমন জাঁতাকলে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন এসব জেলার যাত্রীরা।
সিলেট: শুক্রবার সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা বাস ছাড়া দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে আন্তঃজেলা বাস ছাড়লেও সংখ্যায় খুব কম। দীর্ঘ সময় পর পর হাতে গোনা এক-দুটি গাড়ি ছেড়ে যায়। দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোও বন্ধ ছিল।
শুক্রবার সকালে সিলেট মহানগরের বাস টার্মিনালের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্যেশে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাদের মতে, প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে হবে সবাইকে। তবে এভাবে বিপাকে পড়তে হবে এটা ধারণাও করতে পারেননি বলে জানান তারা।
শ্যামলী বাসের কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী জহিরুল ইসলাম বলেন, সিলেটে এক নিকট আত্মীয়র বাসাই এসেছিলাম গত মঙ্গলবারে। আজ ঢাকাতে ফিরে যেতে হবে। কাল থেকে অফিসে যোগ দিতে হবে ছুটি শেষ হয়ে গেছে। আগে থেকেই জানতাম বিএনপির সমাবেশে কিছু গাড়ি বন্ধ থাকবে। তবে কোনো ছোট গাড়িও যে চলবে না এটা বুঝতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম যেহেতু শনিবার ধর্মঘট তাই আজকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসেছিলাম, কিন্তু এখানে এসে কোনো বাস পাচ্ছি না।
সিলেট মাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রী রাকিব হাসান বলেন, ছুটির দিনে অনেকেই মাজারে যাতায়াত করেন। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন। অনেকের আবার মানত থাকে তারাও আসেন। আজকের এই ধর্মঘটের কারণে তারা কেউই যাতায়াত করতে পারছেন না।
এদিকে বন্ধের দিনে মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন মো. নূর আলম। গাড়ি বন্ধে পরেছেন বিপাকে। নূর আলম বলেন, আজ মাদরাসা বন্ধ থাকায় মায়ের সঙ্গে মৌলভীবাজার নানাবাড়ি যাওয়ার জন্য বেড় হয়েছি। কিন্তু গাড়ি বন্ধ থাকার কারণে বাস টার্মিনালে এসে দেখছি গাড়ি বন্ধ। এখন কিভাবে যাবো বুঝতে পারছি না।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে চার দফা দাবিতে শুক্রবার টানা ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। এদিন সকালে এ জেলা থেকে দূরপল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি। চলাচল করেননি অভ্যন্তরীণ কোনো পরিবহনও। এতে অনেকেই সকালে বাসস্ট্যান্ডে এসে ফিরে গেছেন। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় এ পথের যাত্রীদের।
ধর্মঘটের ফলে দুর্ভোগের শিকার এক নারী যাত্রী জানান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা থেকে সিলেটে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ নতুন বাসস্ট্যান্ডে যান তিনি। সকালে এসে জানতে পারেন পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আনিসুল হক বলেন, শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে কেন ধর্মঘট? এটি তথাকথিত ধর্মঘট। সরকারের নির্দেশ পালন করেছে পরিবহন নেতারা। পরিবহন ধর্মঘট সরকারের সিদ্ধান্তে হয়েছে। তবে এখন জনগণই সরকারকে লাল কার্ড দেখাচ্ছে। সরকার বাস মালিকদের নিয়ে ধর্মঘট দিয়ে হাস্যকর কাজ করছে। অনেকেই সিলেটের পথে আছে আর অনেকেই পৌঁছে গেছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম নুরুল বলেন, আমাদের পূর্ব ঘোষিত সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে বাধা সৃষ্টি করার জন্য এই পরিবহন ধর্মঘট। যেন আমাদের নেতাকর্মীরা সিলেট পৌঁছাতে না পারে। কোনো বাধা আমাদের আটকাতে পারবে না। সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা সমাবেশে যোগ দেব। ইতোমধ্যে অনেক নেতাকর্মী সিলেট পৌঁছে গেছেন।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার সকালে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় জেলা বাস মিনি বাস পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক। এসময় তিনি দাবি করেন, বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে আমাদের কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।
হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে শুক্রবার সকাল থেকে সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। বাস বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। চাকরির পরীক্ষার্থীদের বেশি ভাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া সিএনজি, লেগুনার ভাড়াও বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়েই বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যস্থলে যান যাত্রীরা।
হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, সমাবেশকে উদ্দেশ্য করে আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। নবীগঞ্জের সালামতপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আমাদের কয়েকটি বাস ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের সাত উপজেলায় শুক্র সকাল থেকে শুরু হয় পরিবহণ ধর্মঘট যা চলবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। ধর্মঘটে প্রথম দিনেই চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এ জেলার সাধারণ যাত্রীদের। জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েও অনেকে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন বন্ধ, ব্যাটারিচালিত টমটমের অবৈধভাবে চলাচল, ট্রাক, লরি, পিকআপ, ক্যাভার্ডভ্যানে চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও জেলায় একটি স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাবিতে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
ধর্মঘট নিয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতি: মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ প্রশাসনের হয়রানি বন্ধে সিলেটের তিন জেলায় দুদিনের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয় শুক্রবার সকাল থেকে। বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগের দিন শুরু হওয়া এ ধর্মঘট চলবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। ধর্মঘট নিয়ে চার জেলার পরিবহন মালিক শ্রমিক সমিতির বক্তব্য প্রায় এক। তাদের দাবি, বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে আমাদের কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, শনিবার (১৯ নভেম্বর) সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশের ধারাবাহিকতায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আইএ/এএল