প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২, ১০:৪০ পিএম
পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষায়িত ইউনিট ‘এন্টি টেরোরিজম ইউনিট’ নিষিদ্ধ হিযুবত তাহরীরের ৬ সদস্যকে গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। এমন কি এ ছয় জঙ্গির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য ছবি দিয়ে তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
এটিইউ সূত্র জানায়, সম্প্রতি হিজবুতের বেশ কিছু সক্রিয় সদস্য অনলাইনে সমাবেশ করেন এবং রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেন। তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা রয়েছে। তারা হলেন- আ. রহমান, শিবলী আহম্মেদ, মো. আবু জায়িদ, মো. ইমাদুল আমিন, মো. ফয়সাল ও হাফিজ আল রাজি। তারা সবাই হিযবুত তাহরীরের সদস্য। পলাতক এই ছয়জনকে ধরিয়ে দিতে সহায়তাকারীরা ‘ইনফরম এটিইউ’ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে নাম-পরিচয় গোপন রেখে তথ্য পাঠাতে পারবেন। সহায়তাকারীর পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে এটিইউ।
এটিইউ বলছে, বাংলাদেশে চলমান বেশ কিছু উগ্রবাাদী ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট সংগঠনের মধ্যে সরকার বিভিন্ন সময়ে ৮টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং এর মধ্যে ‘হিযবুত তাহরীর’ অন্যতম। এই সংগঠনটিকে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’ এর বেশ কিছু সক্রিয় সদস্য ২০২০ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি অনলাইনে সমাবেশ করেন। তাদের ভাষ্যমতে- “খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধান কিভাবে জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করবে, খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধান কিভাবে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও উন্নত অবকাঠামো নিশ্চিত করবে, খিলাফতে রাশিদাহ্ অতি সন্নিকটে এবং আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র কিভাবে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করবেসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। মোঃ ফয়সাল উক্ত অনলাইন সমাবেশে কোরআন তিলওয়াত করেন। পরবর্তীতে একই বছরের ১০ অক্টোবর অনলাইনে আবারো সমাবেশ করে, মোঃ আবু জায়িদ তার ভাষ্য মতে বলেন, “দেশের অর্থনীতি আজ এই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে কেন?’’ এই বিষয়ে প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য রাখেন। আঃ রহমান তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলেন, ‘‘ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং নেতৃত্বশীল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের নীতিমালা’’ নিয়ে প্রায় ৩৩ মিনিট আলোকপাত করেন। মোঃ ইমাদুল আমিন তার মতো করে প্রায় ২৩ মিনিট ধরে ‘‘খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে বাধাসমূহ ও সেগুলো উত্তরণে জনগণের প্রতি তাদের দিক নির্দেশনা’’ আসামীগণ দেশ হতে চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করে যে কোনো মূল্যে কথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, ভীতি ও দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করে আসছে। এ ছাড়াও তারা সাধারণ জনগণকে তাদের সংগঠনের প্রতি এবং উগ্রবাদী কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সাইবার স্পেস ব্যবহারের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া না গেলেও তাদের গ্রেফতারে সম্ভ্যাব্য সবস্থানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রায়ই রাজধানীর বিভিন্ন প্রধান সড়কসহ অলিগলির দেয়ালে দেখা যাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর পোস্টার। রাতের অন্ধকারে এসব পোস্টার কে বা কারা লাগাচ্ছে এখনো তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তারা বলছে, বিষয়টি নজরে এসেছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাজধানীর বনশ্রী, মিরপুর, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, ধানমন্ডি ছাড়াও বিভিন্ন জায়গার প্রধান সড়ক এবং অলিগলিতে হিযবুত তাহরীরের এসব পোস্টার দেখা যাচ্ছে। পোস্টারে, দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও চালানো হচ্ছে সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, সংগঠন হিসেবে হিযবুত তাহরীরের চরিত্র কী এ বিষয়টি প্রথম দেখতে হবে। তাদের মূল কাজ রেডিক্যালাইজড করা। জঙ্গি গঠনগুলোকে প্রতিহত করা যায় কিন্তু রাজনৈতিক সংগঠনের মতোই এই হিযবুত তাহরীর। মগজ ধোলাই বা রেডিকেলাইজেশনে জড়িত থাকলেও সরাসরি কোনও জঙ্গি সংগঠন যে ধরনের কাজ করে সে ধরনের কোনো কাজে তারা জড়িত থাকে না। তবে তারা উগ্রবাদের জন্মদাতা। সংগঠনটির কার্যক্রম কিভাবে বন্ধ করা যায় সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, কারা হিযবুত তাহরীরের পোস্টার লাগিয়েছে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন তথ্য ও পর্যালোচনা করে আমরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।
এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস শাখার পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা বিভিন্ন সময় অনলাইনে মিটিং করছে। নিজেদের প্রচার-প্রচারণার জন্য বিভিন্ন জায়গায় লিফলেট বিলিসহ পোস্টার লাগাচ্ছে। যখনই আমরা তথ্য পাচ্ছি তাদের আইনের আওতায় আনছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে হিযুবতের ৬ জন নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।
আইএ/এএল