প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২২, ১০:৫৬ পিএম
নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশসহ সাত দফা দাবিতে ২৮ নভেম্বর (২৭ নভেম্বর দিবাগত) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারা দেশে লাগাতর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন নৌযান শ্রমিকেরা।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘সাধারণ নৌ-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত বিভিন্ন নৌযান শ্রমিক সংগঠনের নেতারা কর্মসূচির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান এই ধর্মঘটের আওতায় থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ সিকদার বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার বিধান থাকলে সর্বশেষ মজুরি কাঠামোর মেয়াদ গত বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু নৌযান মালিকদের সংগঠনগুলো বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। এ ছাড়া এই ১৬ মাসে নৌ মন্ত্রণালয় ও শ্রম অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বহুবার দেন-দরবার করেও ফল পাওয়া যায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে সবুজ সিকদার বলেন, গত সাত বছরে (৬ বছর ৪ মাস) কয়েক দফা দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। মজুরি-ভাতা বৃদ্ধি না হওয়ায় নৌযান শ্রমিকেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এখন তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই সাধারণ শ্রমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হচ্ছে। তবে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং শ্রম অধিদপ্তর মজুরি বৃদ্ধির গেজেট প্রকাশ করলে লাগাতর নৌ-শ্রমিক ধর্মঘটের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নৌ-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. মনিরুল ইসলাম মাস্টার। সংগঠনের আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন ড্রাইভারের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বেপারী, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান মাস্টার, নৌ-শ্রমিক নেতা আনিসুর রহমান ও এনায়েত হোসেন লিটন।
সাত দফা দাবি
১. ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ।
২. প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে ছাড়পত্র প্রদান।
৩. চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব নৌবন্দরে লাইটার জাহাজসহ অন্যান্য নৌযান রাখার জন্য পোতাশ্রয় নির্মাণ, ঘাট ইজারাদার ও বিআইডব্লিউটিসির ছাড়পত্র দেখার নামে বিভিন্ন স্থানে মালিকদের দালাল কর্তৃক শ্রমিক হয়রানি-নির্যাতন বন্ধ।
৪. উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের চুক্তি ও বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রোটোকলের নিয়ম অনুযায়ী ভারতগামী জাহাজের শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস, পোর্টভিসা, নিত্যপণ্য ক্রয়ের সুবিধা ও অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা।
৫. চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জালানি তেল সরবরাহের কার্যক্রম পুনরায় বিবেচনা করে ট্যাংকার জাহাজগুলো নিরাপদে চলাচলের সুযোগ নিশ্চিত, নৌযানের ফিটনেস পরীক্ষা এবং ইনল্যান্ড মাস্টার, ড্রাইভার, সুকানী ও গ্রিজারদের যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দালালদের দৌরাত্ম বন্ধ, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালে পরীক্ষা কেন্দ্র ও নৌ আদালত স্থাপন।
৬. যাত্রবাহী লঞ্চশ্রমিকদের গেজেট অনুযায়ী বেতন প্রদান, বিভিন্ন ঘাট ও পন্টুনে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শক এবং মালিকদের হয়রানি ও শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা বন্ধ।
৭. নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, নৌ চ্যানেলে জাল ফেলে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও বিভিন্ন স্থানে বিআইডব্লিউটিএর বারদিং ইজারার নামে চলন্ত জাহাজ থেকে চাঁদাবাজি-শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ, চট্টগ্রাম চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল, নাব্যহীন নৌপথ ড্রেজিং এবং বয়া-বিকনবাতি ও মার্কা স্থাপন করে নৌ চলাচল সঠিক রাখ এবং অবৈধভাবে বালুমহাল ইজারা বন্ধ।
আইএ/