• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

পাঁচশ’ স্পটকে চিহ্নিত করে রাজধানীতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২, ১০:২৭ পিএম

পাঁচশ’ স্পটকে চিহ্নিত করে রাজধানীতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান

ইমরান আলী, ঢাকা

রাজধানী জুড়ে চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। গত চার দিনে এ বিশেষ অভিযানে প্রায় দুই শতাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আটক হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, প্যাথেড্রিন ইঞ্জেকশন প্রভৃতি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি রাজধানীতে মাদকের অপব্যাবহার বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলছে এই অভিযান। থানা পুলিশের পাশাপাশি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সকল টিম এই অভিযানে অংশ নিচ্ছে।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান মোল্লা বলেন, ডিএমপির ৮টি বিভাগে এ বিশেষ অভিযান চলছে। বিশেষ অভিযানে গত কয়েক দিনে প্রায় দুই শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ও বিপুল পরিমান মাদক উদ্ধার হয়েছে। এ অভিযান পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

ডিএমপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় ৩৭ জনকে, ২ নভেম্বর ৪৭ জন, ৩ নভেম্বর ৬১ এবং ৪ ডিসেম্বর ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক বিরোধী অভিযান চালানোর আগে পুরো রাজধানীর মাদকের চিত্র সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যে মাদকের ভয়ংকর স্পট ও ব্যবসায়ীদের বিষয়ে বিশদ তথ্য দেয়া হয়েছে। আর এই তথ্য সূত্র ধরেই অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ।

মাদকের চিহ্নিত বিপজ্জনক স্পট : সম্প্রতি গোয়েন্দাদের তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, মাদকস্পটের সংখ্যা রয়েছে পাঁচশ‍‍`রও বেশি। এর মধ্যে লালবাগের শহীদনগর ১ থেকে ৬ নং গলি,মৌলভীবাজার কাঁচাবাজার ও বলিয়াদী হাউস এলাকা, বালুরঘাট বেড়িবাঁধ, কোতোয়ালি থানা এলাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এবং কর্মচারীদের স্টাফ কোয়ার্টারের আশপাশ এলাকা,সামসাবাদ এলাকার জুম্মন কমিউনিটি সেন্টারের আশপাশ, বাবুবাজার ব্রিজের ঢালে, বুড়ির বাগান,স্টার সিনেমা হলের সামনে, নয়াবাজার ব্রিজের ঢালে, নয়াবাজার ইউসুফ মার্কেট ও আশপাশসহ ২০টি স্পটে মাদক বিক্রি হয়। রমনা মডেল থানা এলাকার মাদক স্পটগুলো হচ্ছে- দিলু রোডের পশ্চিম মাথা, মগবাজার রেলক্রসিং-সংলগ্ন কাঁচাবাজার, আমবাগান চলি্লশঘর বস্তি, পেয়ারাবাগ বস্তি,মধুবাগ ঝিলপাড়, মালিবাগ রেলক্রসিং থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত এলাকা। শাহবাগ থানাএলাকায় ফুলবাড়িয়া সেক্রেটারিয়েট রোডের আনন্দবাজার বস্তি, ওসমানী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর, টিএসসি, তিন নেতার মাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আশপাশ এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, কাঁটাবন এলাকার ভাসমান বিক্রয় স্পট। মোহাম্মদপুর থানাএলাকায় জজ মিয়ার বস্তি সবচেয়ে বড় মাদক স্পট। কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকার ট্যানারি পুকুরপাড়, পাকা পোল, কয়লাঘাট বেড়িবাঁধসহ ১৮টি স্পটে মাদক বিক্রি হচ্ছে। সূত্রাপুরে স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে রেললাইন সামাপাড়া বস্তি, মুরগিপট্টি, ধূপখোলা মাঠ, মুন্সিরটেক কবরস্থান, যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার ধলপুর সিটি পল্লী, ওয়াসা বস্তি, আইডিয়াল স্কুল গলি, নবুর বস্তি, বউবাজার গলি,লিচুবাগানসহ ২৮ স্পটে মাদক বিক্রি হয়। শ্যামপুর থানা এলাকার জুরাইন রেলগেট, ব্রাদার্স ক্লাব সংলগ্ন মাঠ, ধোলাইখাল, নোয়াখালী পট্টি, মুরাদপুর মাদ্রাসা লেন, বেলতলা, শ্যামপুর বাজারসহ ৩০টিমাদক স্পট রয়েছে। এ ছাড়াও ডেমরা থানা এলাকায় ছয়টি, মিরপুর মডেল থানা এলাকায় আটটি,পল্লবী থানা এলাকায় ২৪টি, কাফরুল থানা এলাকায় ১০টি, শাহআলী থানায় চারটি, বাড্ডায় ১৫টি, ভাটারা থানা এলাকায় তিনটি, খিলক্ষেত থানা এলাকায় পাঁচটি, ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকায় তিনটি,উত্তরা মডেল থানায় নয়টি, বিমানবন্দর থানা এলাকায় তিনটি, তুরাগ থানা এলাকায় আটটি,উত্তরখান থানা এলাকায় ১১টি ও দক্ষিণখান থানা এলাকায় ১৩টি স্প মাদক স্পট রয়েছে।

তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী : অন্যতম রাজধানীর প্রধান প্রধান স্পটগুলোর মধ্যে আনন্দবাজার বস্তি অন্যতম। এখানে রয়েছে মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে চিহ্নিত বানুর মাদক স্পট। এর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে নিমতলী বস্তির সাবিনা ও পারুলের। পাইন্যা সর্দারের বস্তির রেণু, গণকটুলির মনোয়ারা রহমান নাছিমা, শ্যামপুরের ফজিলা, রানী বেগম এবং পারুলী। শাহীনবাগের পারভীন,তেজকুনিপাড়ার সনি, হিরা, নাসিমা। হাজারীবাগের স্বপ্না, কলাবাগানের ফারহানা ইসলাম তুলি,চানখাঁরপুলের পারুল, বাড্ডার হোসেন মার্কেট এলাকার সুমি,  পাঁচতলা এলাকার কোহিনুর, আদর্শনগরের পিচ্চি মোশারফ, পিচ্চি শহিদ, মোল্লাপাড়ার রেহেনা, সুন্দরী মিঠু, একই এলাকার কানা কাউসার, মোল্লা পাড়ার কানা কাউসার, লিটন মোল্লা পোষ্ট অফিসের গলির লম্বা মোশারফ, মুনা, ১১ স্মরণীর কামাল, কাঁচাবাজার এলাকার আরিফ, আলী ও তার স্ত্রী, পাঁচতলা বাজারের পিচ্চি শহীদের বোন, আনন্দনগরের আনোয়ার। রামপুরের সীমা, শাহজাহানপুরের মুক্তা বিশেষভাবে ড্রাগ কুইন বা মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে চিহ্নিত। এদের নানাভাবে সহযোগিতা করে মাদকসম্রাট দাঁইত্যা বাবু, ডাইল আশরাফ, মতি, মিন্টু, দস্যু ইব্রাহিম, নুরনবী মুকুল আলম, রুবেল, সাত্তার সাহাবুদ্দীন, সন্ত্রাসী জলিল, কানা সেলিম, ন্যাটা মাসুদ। মহাখালীর আলোচিত মাদকসম্রাজ্ঞী হলো জাকিয়া ওরফে ইভা, রওশন আরা বানু। বনানীর শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞী আইরিন ওরফে ইভা।গুলশানের অতি পরিচিত মাদক সম্রাজ্ঞী হলো মৌ এবং বারিধারার নাদিয়া ও যুথী। উত্তরার গুলবাহার, নাদিয়া এবং মাহমুদা ওরফে মুক্তি। সাততলা বস্তি এলাকায় জামরুল, কামরুল, সীমা,পিংকু, রুমা, রুবেল, জামাই নাজিমুদ্দিন, সোহেল জমজমাট মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কড়াইল বস্তিতে প্রধান প্রধান মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে রিনা, জোসনা, মাস্টার আলমগীর,জলিল, বেলতলার ফুল মিয়া, বিউটি ও নূরু ।

রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছি। প্রতিদিন চলছে মাদকের অভিযান।

কামরাঙ্গী থানার থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রায় প্রতিদিন গ্রেফতারও হচ্ছে।

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, মাদক বিরোধী অভিযান চলছে। দিনে রাতে এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ কয়েকটি স্পটকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি।

আইএ/

আর্কাইভ