প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২২, ০৩:০১ এএম
আগামী জুনে জাতীয় গ্রিডে আরও ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। বেসরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট পাওয়ার স্টেশন-২ থেকে তা সরবরাহ করা হবে। গ্রুপটির চেয়ারম্যান আজিজ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আগামী বছরের জুনে সামিটের নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট পাওয়ার স্টেশন-২ থেকে জাতীয় গ্রিডে ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। সর্বনিম্ন মূল্যে এ তা সরবরাহ করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এইচ ই পিটার হাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিদর্শন কালে এই তথ্য জানান আজিজ খান।
তিনি বলেন, সামিটের নির্মাণাধীন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে জিডিপি যে শতকরা ৭-৮ ভাগ উন্নতি হয়েছে, সেটা বিদ্যুতের কারণে হয়েছে। জিডিপির গ্রোথকে ধরে রাখতে চাইলে বিদ্যুতের প্রয়োজন। এ কেন্দ্রে গ্যাস থেকে ৬২ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। ফলে খরচ কম হবে।
সামিট চেয়ারম্যান জানান, এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গ্যাস, ডিজেল, হাইড্রোজেনে চলতে পারে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কার্বণ নিঃসরণ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬০ ভাগ কম এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৪০ ভাগ কম।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম আগের চেয়ে কমেছে। যেটা ৬০ ডলার পার এম এম ভি কিউ হয়ে গিয়েছিল, সেটা এখন ২৫ ডলার পার এম এম ভি কিউ হয়েছে। আর কিছুটা কমলে বাংলাদেশের অসুবিধা হবে না।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহ সম্পর্কে আজিজ খান বলেন, আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত পেট্রোবাংলা আমাদের গ্যাস দিবে। কারণ এখানে তা দিলে সর্বনিম্ন মূল্যে বিদ্যুৎ পাবে।
তিনি বলেন, রাশিয়া বিশ্বের ২০ ভাগ জ্বালানি সরবরাহ করত। সেটা সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ইউরোপ বাকি বিশ্বের জ্বালানি নিয়ে নিচ্ছে। তবে তাদের সামারে অর্থ্যাৎ জুন-জুলাইয়ে যখন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে, তখন তাদের জ্বালানি সবচেয়ে কম লাগে। ফলে এ প্ল্যান্ট চালুর সময় বিশ্ববাজারে মূল্য কমে আসবে।
এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এইচ ই পিটার হাস বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সামিটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমেরিকান কোম্পানি জিই’র প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যৌথভাবে এ কোম্পানি গড়ে তোলা হয়েছে। এতে আমেরিকান অন্যান্য কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে জ্বালানিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে।’
করোনাকালে ভ্যাকসিন দিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা। বিশ্বে জ্বালানি সংকটের সময় বাংলাদেশের পাশে আমেরিকা থাকবে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের পাশে থাকব। শুধু গ্যাস, কয়লা বা ডিজেলভিত্তিক গতানুগতিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে নয়, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে আমাদের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানায় তেল-গ্যাস উত্তোলনে আমেরিকা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিশেষজ্ঞ নই। তবে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় থাকা তেল, গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাব্যতা আমেরিকান কোম্পানিগুলো যাচাই করে দেখবে।’
পিটার হাস বলেন, ‘আমেরিকা উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাওয়ার সেক্টরের উন্নতিতে কাজ করছে। মার্কিন কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও উন্নতিতে সহায়তা করছে।’
এদিন দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের চর সানাউল্লায় নির্মাণাধীন সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড-২ এবং উৎপাদনে থাকা মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড পরিদর্শন শেষে সিলেটে সামিট বিবিয়ানা পাওয়ার কোম্পানি দেখতে যান তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, ভাইস চেয়ারম্যান লতিফ খান, জিই গ্যাস পাওয়ারের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সিইও দীপেশ নন্দা ও জিই গ্যাস পাওয়ারের কান্ট্রি লিডার নওশাদ আলী প্রমুখ।
এআরআই