প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২২, ১২:২৫ এএম
সবেমাত্র কলেজপড়ুয়া ছাত্র। চলতি বছরেই বসবেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। আর এরই মাঝে বনে গেছেন প্রায় শতকোটি টাকার মালিক। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। রাজধানীর সিটি কলেজের ছাত্র রাতুল অনলাইন জুয়ার সাইট চালিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। যেহেতু কোটি কোটি টাকার মালিক রাতুল সেহেতু তার চলাফেরাতেও আভিজাত্যের ছোঁয়া। কি নেই তার! যখন যা মনে হয়েছে তাই-ই করেছে। রয়েছে সিভিক প্রাইভেট কার, প্রিমিওর মত গাড়ি। আর বাইক রয়েছে কয়েক হালি। সেগুলো আর ফিফটিন তো অবশ্যই। আর ফোন যখন যেটি মনে হয়েছে সেটিই কিনেছেন। আইফোন ১৪ এর সর্বশেষ মডেলও তার হাতে। বিলাসী জীবন বলতে যা বোঝায় তার সবটিই সে ভোগ করেছে। গ্রামের বাড়িতে বাবাকে কিনে দিয়েছেন ৪টি ভেকুও।
শত শত লোককে কাঁদিয়ে শতকোটি বাগানো এ তরুনসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতারের পর বুধবার জেল হাজতেও পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা অন্য দু’জন হলেন মুন্না ও ইয়াসিন।
জানা গেছে, পাবনা জেলার আমিনপুর থানার বাশতলা গ্রামের আজিবুর রহমানের ছেলে রাতুল। সে `মেলবেট` নামক একটি অনলাইন জুয়ার সাইটের বাংলাদেশী মুল এজেন্ট। এছাড়াও আরও কয়েকটি জুয়ার সাইট পরিচালনা করে সে। বাবা সামান্য মহুরীর কাজ করে। কিন্তু সে ৫০ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট গাড়ীতে চলাফেরা করে। তার তিনটি R15 ভার্সন 4 বাইক আছে। যার একেকটির মুল্য চার লাখের বেশি। তার বড় ভাইকে তিনটি এস্কেবেটর( মাটি কাটা মেশিন ) কিনে দিয়েছে। সে সুবাস্তুতে কয়েক কোটি টাকার পার্টনারশিপ এ একটা বিদেশি পণ্যের শোরুমের কাজ করছে। থাকে ধানমন্ডির এক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। তার ব্যাবহৃত ৫ টি মোবাইল ফোনের একেকটির মুল্য প্রায় দুই লাখ বা তারও বেশি।
সূত্র জানায়, সে সম্প্রতি আজারবাইজানের একটা জুয়া কোম্পানির ২০০ কোটি টাকা মুল্যের এজেন্সি ক্রয়ের আলোচনা করছে এবং পরীক্ষা শেষ করে আজারবাইজান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এতকিছু তার জুয়ার সাইট পরিচালনা করে। মোট ৫ সহযোগীর মধ্যে পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে আরো দু’জন। এদের মধ্যে একজন নবাব ও আরেকজন মুকুল।
জানা যায়, রাতুল তার বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। তার বাবার অ্যাকাউন্ট গুলো চেক করলে মিলবে টাকার তথ্য।
গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি মনিরুল ইসলাম বলেন, `বাকিদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।`
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতুল তার সহযোগীদের দিয়ে এ দীর্ঘদিন ধরে এ চক্র গড়ে তোলে। অনলাইন গেইমের মাধ্যমে অন্তত কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডলার বিজনেসের মাধ্যমে এ টাকা বিদেশে পাচার ও করে।
রাজধানীর ধানমন্ডির এক বিলাসবহুল বাড়িতে ভাড়া থাকে। তার রুমেও এসি লাগানো। কাপড়ের শো-রুমটি এখন ডেকোরেশন এর পর্যায়ে রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, এক সময় দরিদ্র থাকা পরিবারটির উথ্যান চোখ ধাঁধানো। এই বয়সী এক ছেলের এতটাকা কিভাবে আসলো এটিই আলোচনা চলে।
তারা বলছেন, রাতুলের পুরো পরিবার এই জুয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত। তার বাবা ও ভাইও এ চক্রের অন্যতম । তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি ভুক্তভোগীদের।
রাতুলের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, রাতুলের কথায় বিনিয়োগে দ্বিগুন হওয়ার প্রলোভনে কয়েকবারে প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর কিছুই পাননি। যেহেতু তিনি কাজটি অন্যায় করেছেন সেহেতু তিনি এ বিষেয়ে অভিযোগও করতে পারছেন না।
তিনি বলেন, `এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি চলছে।`
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েজন জুয়াড়ি বলেন, `প্রথমে ৩ হাজার পরে ৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যংকিংয়ের মাধ্যমে ধরা হয়। এরপর আসিক্তি বাড়লে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত চলে যায়। আর এভাবেই টাকা শেষ হতে থাকে।`
সূত্র মতে, দেশে নতুন আতঙ্কের নাম অনলাইন জুয়া। এক ধরনের কৌতূহল থেকে তরুণ প্রজন্ম আকৃষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে। পাঁচ-দশ হাজার টাকার বিনিয়োগে শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। বিদেশ থেকে পরিচালিত এসব সাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশের এজেন্টরা। জুয়ায় বিনিয়োগ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে।
এসএএস