• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

‘পোষ্টারে আবদ্ধ নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর’

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২২, ১০:১৮ পিএম

‘পোষ্টারে আবদ্ধ নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীর’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীতে আবারো পোস্টার সাঁটিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর। বনশ্রী, বাড্ডাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় তাদের নতুন পোষ্টার দেখা গেছে। বুধ বা বৃহস্পতিবার রাতে এই পোষ্টারগুলো সাঁটানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এমন এক সময় এ পোষ্টারগুলো সাঁটানো হলো যখন র‌্যাব ও পুলিশ নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। গত বুধবারও রাজধানীর ডেমরা থেকে এ সংগঠনটির ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

প্রকাশ্য না থাকলেও কিছুদিন পর পর অনলাইন ও পোষ্টার সাঁটিয়ে নিষিদ্ধ এ সংগঠনটি তাদের অস্তিত্বের জানান দেয় বলে জানান পুলিশের কর্মকর্তারা।

তারা বলেন, ‍‍`প্রকাশ্য এ সংগঠণের কোন ধরনের নাশকতা চালানোর শক্তি নেই। মাঝে মধ্যে গোপনে তারা কিছু পোষ্টার সাঁটায়। তবে সংগঠনটির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম।‍‍`

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন পর পর নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর বিভিন্ন এলাকায় সরকার বিরোধী নানা লেখা সম্বলিত পোষ্টার সাঁটায়। রাজধানীর ধানমন্ডি, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বসুন্ধারা, সেগুনবাগিচা এলাকায় তাদের পোষ্টার বেশ দেখা যেত। তবে এবারে বাড্ডা, বনশ্রী এলাকাতেও এ পোষ্টার চোখে পড়েছে। অর্থাৎ এ এলাকাগুলোতেও সংগঠনটির কর্মীরা যে সক্রিয় সেটিরই জানান দেয় এ পোষ্টারের মাধ্যমে। এবারের পোষ্টারে লেখা রয়েছে, ‘জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী বিএনপি গোষ্ঠী কর্তৃক মার্কিন বৃটেনের স্বার্থ রক্ষার প্রতিযোগীতায় দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকি মুখে। এছাড়াও সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী নানা বক্তব্য লেখা রয়েছে পোষ্টারে।

ডিএমপির খিলগাঁও থানার ওসি ফারুকুল ইসলাম জানান, পোষ্টার লাগানোর বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। বনশ্রীর ওই এলাকাকে ঘিরে আমরা নজরদারী বাড়াবো।

এদিকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিটি ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো আব্দুল্লাহ (২২), তাজুল ইসলাম (৩৩), জিয়াউদ্দিন (৩৭), হাবিবুবুল্লাহ (১৯) ও মাহামুদুল হাসান (১৮)।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান, সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা হতে ৭ জন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া আবরারুল হককে সনাক্ত পূর্বক রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়। আবরারুল হকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশব্যাপী নিখোঁজের চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাথে জড়িত সংগঠনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে রামপুরার হাজীপাড়া এলাকা থেকে ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীকে গ্রেফতার করা হয়।

সিটিটিসি প্রধান আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা সকলেই নব্য উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর সক্রিয় সদস্য। গ্রেফতারকৃত মোঃ হাবিবুবুল্লাহ ও মোঃ মাহামুদুল হাসান উল্লিখিত সংগঠনের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কথিত জিহাদের প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ বাসা ত্যাগ করে। আটককৃত আবদুল্লাহ, তাজুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন সংগঠনের সদস্য হিসেবে কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে গৃহ ত্যাগ করা নতুন সদস্যদের সাময়িক বাসস্থান ব্যবস্থা করা ও প্রাথমিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতো। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে হিজরত করা তরুণদের রিসিভ করে উক্ত আসামিগণ আব্দুল্লাহর বাসায় নিয়ে যেতো এবং তাদেরকে উগ্রবাদী ধারণায় উদ্বুদ্ধ করতো। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে ট্রেনিংয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো।

 তিনি বলেন, ‍‍`এই সংগঠনের উদ্দেশ্য মূলত জঙ্গিবাদের জন্য সদস্য রিক্রুটমেন্ট, অর্থ সংগ্রহ, সশস্ত্র সামরিক ট্রেনিং ও আধুনিক অস্ত্র ক্রয়সহ বিশাল জঙ্গি বাহিনী গঠন করা। সংগঠনের উদ্দেশ্যে ছিলো পাহাড়ে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি, নিরাপদ সামরিক ট্রেনিং, সংগঠনের উগ্রবাদী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকল্পে দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে পুনরায় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া।

তিনি বলেন, ‍‍`কোন জঙ্গি সংগঠনকেই মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবে না। জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।‍‍`

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথা চাঁড়া দেয় হিযবুত তাহরীর। পরবর্তীতে সরকার বিরোধী নানা কর্মকান্ডের কারণে ২০০৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। গ্রেফতার করে হিযবুত তাহরীরের শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দীন ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজনকে। কিন্তু তারপরও থেমে থাকেনি এদের কার্যক্রম। রাজধানীছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পোষ্টার লিফলেট ছড়ানো থেকে শুরু করে প্রকাশ্যই মিছিল পর্যন্ত এরা করে থাকে। আবার মাঝে মাঝে অনলাইনে মিটিংও করে থাকে।

 

এসএএস

আর্কাইভ