প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২২, ০৭:১৪ পিএম
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে।
সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করছে। জমি রেজিস্ট্রির যাবতীয় খরচের টাকা আদায়ও হচ্ছে সমিতির মাধ্যমে। সাধারণ দলিল লেখকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন সমিতির নেতাদের কাছে।
তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে সরকারি নির্ধারিত ফিসের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ ও নিরীহ মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য। জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন সমিতির নেতারা থেকে শুরু করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে গিয়ে হরিণাকুন্ডু সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির কাছে জমির দাতা ও গ্রহীতাদের জিম্মিদশার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। সমিতির বিনা অনুমতিতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো জমি রেজিস্ট্রি হয় না বলে ব্যাপক অভিযোগ আছে। সাধারণ দলিল লেখকদেরও সমিতির বিনা অনুমতিতে দলিল করার ক্ষমতা নেই। দলিল লেখার যাবতীয় টাকা দিতে হয় সমিতিকে। তারপর সমিতির গোপনীয় একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করার পরই দলিল যায় সাব-রেজিস্ট্রারের টেবিলে। সেখানেও প্রতি টেবিলে দলিল প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং জমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কাগজের ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট করণিক সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে প্রকারভেদে আদায় করেন লাখ টাকা পর্যন্ত।
এমনটাই বলছেন, ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৫৮টি দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে এ অফিসে। আরও জানা যায়, এ অফিসে সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক রয়েছেন ৭২ জন। সমিতিভুক্ত রয়েছেন ৬৬ জন। ৬ জন রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে আইনের বেড়াজালে। আইন অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ও সরকারি ফি’র হার নির্ধারণ করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে একটি তালিকা করে টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু হরিণাকুন্ডু সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না।
সাব-রেজিস্ট্রারও সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে অনেকটা তাল মিলিয়ে চলছেন। সম্প্রতি চটকাবাড়িয়া মৌজায় ৪ শতক জমি রেজিস্ট্রি করতে ১২ লাখ টাকার দলিলে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে ২৮ হাজার পাঁচশত টাকা বেশি নিয়েছে দলিল লেখক আকরামুল রতন। সাব রেজিস্ট্রি অফিসের বড়বাবু নেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা। বিভিন্ন খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হলেও দেয়া হয় না কোনো রশিদ। দিন শেষে সমিতির দলিল লেখকদের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয় এ টাকা। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক জানান, সমিতির কার্যক্রম দির্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সমিতির নামে বাড়তি কোনো টাকা নেয়া হয় না বলে জানান তিনি। তবে পারিশ্রমিক বাবদ কিছু টাকা নিয়ে থাকেন বলে স্বীকার করেন।
যা দিন শেষে দলিল লেখকদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। হরিণাকুন্ডু উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার (এসআর) মেহেদী আল ইসলাম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম অস্বীকার করে বলেন, ‘সমিতির নামে জিম্মি করে দাতা বা গ্রহীতার কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় গ্রহণযোগ্য নয়। সমিতির বৈধতা আছে কিনা জানতে চাইলে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
এএল/