প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২২, ০১:৪৫ এএম
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অনলাইনে সেবা নেওয়ার কথা বলে বাসায় ডেকে নিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা বিউটিশিয়ানকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মো. রিয়াদ (২৪) ও ইয়াছিন হোসেন ওরফে সিয়াম (২৩) নামে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচএম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তারা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। ধর্ষণের সঙ্গে তাদের আরেক বন্ধু জিতুও জড়িত।
সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার এইচএম আজিমুল হক বলেন, ‘পাঁচ মাসের অন্তঃসত্বা ওই বিউটিশিয়ান নারী হাজারীবাগ এলাকায় বসবাস করেন। সেখানে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে বাসায় গিয়ে নারীদের বিউটি পার্লারের সেবা দিতেন। পেজে দেওয়া নম্বরে গত ১১ অক্টোবর ওই নারীকে ফোন দিয়ে রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় ফেসিয়াল সেবা দেয়ার কথা বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘পরে ওইদিন রাতেই সাভার থেকে শুক্রাবাদের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সন্ধ্যার পর সেই নারীকে গ্রেফতারকৃত রিয়াদ শুক্রাবাদের বাসায় নিয়ে যায়। এ সময় রিয়াদ তার বন্ধু সিয়াম ও জিতু মিলে সেই নারীকে ধর্ষণ করে। পরে তাকে একটি অটোরিকশাতে তুলে দেয় তারা।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের শেষের দিকে সাংবাদিকরা গ্রেফতারকৃতদের কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা নিজের নির্দোষ দাবি করে বলেন, তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
এদিকে সেই রাতের ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী অন্তঃসত্ত্বার ভাই। তিনি বলেন, এক নারীর কাছ থেকে অনলাইনে বিউটি পার্লারের অর্ডার পেয়ে সাভার থেকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসায় যায় আমার বোন। সেখানেই সে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমার বোন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাসায় গিয়ে মেয়েদের বিউটি পার্লারের কাজ করে দেয়। মঙ্গলবার রাতে ধানমন্ডি থেকে এক নারী তার পার্লারের কাজ করানোর জন্য ফোন দেন।
পরে সাভার থেকে রাইড শেয়ারিংয়ে ধানমন্ডির ২৮ নম্বর রোডের বয়েজ স্কুলের কাছে গেলে ঐ নারী একজন পুরুষকে দিয়ে আমার বোনকে রিসিভ করান। এরপর তাকে বাসার দোতলায় নিয়ে একটি রুমে ঢোকানো হয়। ঐ সময় পার্লারের কাজ করানোর কথা বলা সেই নারী আমার বোনকে টাকার বিনিময়ে তিনজন পুরুষের কাছে দিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীর ভাই বলেন, তিনজন পুরুষ আমার বোনকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করে। না খেলে মারধর করে। পরে দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনজন ধর্ষণ করে। পরে তার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। বের করে দেয়ার আগে হুমকি দিয়ে বলে, ‘এখান থেকে চলে যাবি, নইলে তোকে মেরে ফেলবো।’
ঐ সময় আমার বোন প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে ও এ ঘটনা কাউকে না বলার আকুতি প্রকাশ করে বলে, ‘আমার কাছে ভাড়া নেই, ১০০ টাকা দেন চলে যাবো।’ পরে বাসা থেকে অনেক কষ্টে নিচে নেমে রাস্তায় আসে আমার বোন। অভিযুক্তরা রাস্তায় এসে ১০০ টাকা ও ফের হুমকি দিয়ে বলে, ‘সোজা বাসায় চলে যাবি।’
তিনি বলেন, আমার বোন ঘটনাস্থল থেকে রিকশা নিয়ে গাবতলী পর্যন্ত এসে তার স্বামীকে কল দেয়। পরে গাবতলী থেকে তাকে নিয়ে সাভারে যায় তার স্বামী। সাভার থেকে বুধবার ভোর ৫টায় শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
শেরে বাংলা নগর থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া বলেন, ধানমন্ডিতে অন্তঃসত্ত্বা বিউটিশিয়ানকে হোম সার্ভিসের কথা বলে ডেকে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় এক নারীসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত চলমান।
জেডআই/