• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ছয় লেনের দুইটি সেতু উদ্বোধন করবেন আজ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২২, ১২:৪৭ এএম

প্রধানমন্ত্রী ছয় লেনের দুইটি সেতু উদ্বোধন করবেন  আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশের প্রথম ছয় লেনের মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু আজ সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু দুটি উদ্বোধন করবেন তিনি।

অবশেষে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু দ্বার খুলতে যাচ্ছে। দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ দুপুর ১২টায় নিজের কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু উদ্বোধন করবেন তিনি।

এ খবরে আনন্দিত নড়াইল, যশোর, বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। কালনা মধুমতি সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে। এখন অপেক্ষার ক্ষণ গুনছেন যাত্রী সাধারণ, যানবাহন চালকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে গত ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা ঘাটে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুত দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’ নামকরণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে কালনা সেতুর নাম পরিবর্তন করে নদীর নামে ‘মধুমতি সেতু’ নামকরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে এ অঞ্চলের মানুষ।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর ওপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত। এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর ও ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।

জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রুত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবেন। কারণ, বেনাপোল বন্দর থেকে মধুমতি সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দূরত্ব কম হবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও বাঁচিয়ে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা এবং নড়াইল জেলার অন্তর্গত লোহাগড়া উপজেলার মধুমতি নদীর কালনা পয়েন্টে মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর করেন।

এ অঞ্চলের মানুষ এখন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট হয়ে ঢাকা-যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। এই পথে যশোর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে তাদের ১০০ কিলোমিটার বেশি ভ্রমণ করতে হয়। তারা পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না। মধুমতি সেতু উদ্বোধনের পর এই সেতু দিয়ে পদ্মাসেতু হয়ে যাতায়াত করলে তাদের ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব কমে যাবে। এই আঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন সহজ হবে।

মধুমতি সেতু প্রকল্পের কর্মকর্তারাদের মতে, সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্টিলের স্প্যান। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) এ স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। এটি সেতুকে দৃষ্টিনন্দন করেছে।  সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ যা রাজধানীকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।২৭.১ মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চ গতির লেন ৪.৩০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে।

মধুমতী সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। টোল প্লাজার মেশিন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুটি গাড়ি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।

গোপালগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মো. মোশাররফ হোসেন বলেন,  সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর, মংলা সমুদ্র বন্দর ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে।

একইসাথে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার ওপর দৃষ্টিনন্দন নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। ৬ লেনের এ সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ দশমিক দুই নয় কিলোমিটার আর প্রস্থ ২২ দশমিক এক পাঁচ মিটার। ওয়াকওয়েসহ সেতুতে রয়েছে ৩৮টি স্প্যান। নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬০৮ কোটি টাকারও বেশি। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের পরপরই জনসাধারণের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হবে।

কাঙ্ক্ষিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু চালু হলে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্পপণ্য খুব সহজে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় দ্রুত পৌঁছে যাবে। এছাড়া শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে কমবে ভয়াবহ যানজট। পাশাপাশি শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলার ও নৌকা দুর্ঘটনা কমে যাবে।

সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, সেতুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ইত্যাদি থেকে খুলনা, যশোর, বেনাপোল, মংলা, বরিশাল এবং অন্যান্য স্থানে যাতায়াতের জন্য মদনগঞ্জ-সৈয়দপুর-মুক্তারপুর, মুন্সীগঞ্জ-টঙ্গীবাড়ী-লৌহজং ও মাওয়া হয়ে মোগরাপাড়া, মদনপুর, কাঁচপুর ও ডেমরাকে সংযুক্ত করবে। সেতুটি চালু হলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সঙ্গেও যোগাযোগ সহজ হবে। তখন দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের যানবাহনগুলোকে নারায়ণগঞ্জ শহরে না ঢুকে মদনপুর হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া দিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে পারবে।

 

এসএএস

আর্কাইভ