প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২২, ০৩:৫৩ এএম
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হবে রবিবার (৯ অক্টোবর)। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবসটি যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হবে। এ উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
৫৭০ সালে ১২ রবিউল আউয়াল, এই দিনে আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ গোত্রে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। অন্ধকার যুগ থেকে মানবজাতির মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই ধরাধামে। পবিত্র কোরআন শরিফে বর্ণিত আছে, মহানবীকে (সা.) সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকেন।
এক সময় গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানান অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃংখলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই ধরাধমে। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেম অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজা নামের এক ধর্ণাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করেন। পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আদর্শ ও বিচক্ষণতা বর্তমান বিশ্বে জাতিতে জাতিতে সংঘাত-সংঘর্ষ নিরসনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁর জন্ম ও ওফাতের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন। তৎকালীন আরব সমাজের অন্যায়, অবিচার, অসত্য ও অন্ধকারের বিপরীতে তিনি মানুষকে আলোর পথ দেখান এবং প্রতিষ্ঠা করেন সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি নারীর মর্যাদা ও অধিকার, শ্রমের মর্যাদা এবং মনিবের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিদায় হজের ভাষণ সমগ্র মানবজাতির জন্য চিরকালীন দিশারী হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী (সা.) এর শিক্ষা সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুসরণীয়। তার জীবনাদর্শ আমাদের সবার জীবনকে আলোকিত করুক, আমাদের চলার পথের পাথেয় হোক, মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমেই মুসলমানদের অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে এসেছিলেন তওহিদের মহান বাণী নিয়ে। সব ধরনের কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার, পাপাচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানবসত্তার চিরমুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। বিশ্ববাসীকে তিনি মুক্তি ও শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়ে অন্ধকার যুগের অবসান ঘটিয়েছিলেন এবং সত্যের আলো জ্বালিয়েছেন। তিনি বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, ন্যায় ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন এবং মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করে বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বশান্তির অগ্রনায়ক রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নাগরিকদের মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ নানা দিক বিবেচনা করে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন মানব ইতিহাসের প্রথম প্রশাসনিক সংবিধান ‘মদিনা সনদ’। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)- এর অনবদ্য ভূমিকার আরেকটি অনন্য স্মারক হুদায়বিয়ার সন্ধি। বাহ্যিক পরাজয়মূলক হওয়া সত্ত্বেও কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বার্থে তিনি এ সন্ধিতে স্বাক্ষর করেন। তাঁর অমিত সাহস, ধৈর্য ও বিচক্ষণতা তখনকার মানুষকে যেমন বিমুগ্ধ করে, তেমনি অনাগত মানুষদের জন্যও শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারিসহ আজকের দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে প্রিয়নবী (সা.) এর অনুপম জীবনাদর্শ, তাঁর সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ এবং ইবাদতের মাধ্যমেই বিশ্বের শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে বলে আমি মনে করি।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ সব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.) এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
শনিবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। এর আগে তিনি বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্ত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার উদ্বোধন করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পবিত্র কোরআনখানি, দোয়া মাহফিল, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুলে নৈতিকতা ও চরিত্র গঠন বিষয়ক সেমিনার, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।
এছাড়াও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী(সা.) ১৪৪৪ হিজরি উদযাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন ও সাত৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেডআই/